প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন মুর্শিদাবাদের কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ির দুর্গাপুজো বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। শুধু বাংলায় নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পুজো দেখতে মানুষ এখানে ভিড় জমান। এই পুজোর বিশেষত্ব হল এর ঐতিহ্য, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। কুঞ্জঘাটা যেতে গেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লালগোলাগামী ট্রেনে গিয়ে নামতে হবে কাশিমবাজার স্টেশনে। এরপর স্টেশন থেকে টোটো ধরে পৌঁছে যাবেন কুঞ্জঘাটা।
জানা যায়, এই বাড়ির পুজোর সূচনা করেছিলেন মহারাজা নন্দকুমারের পিতা মহারাজা পদ্মনাভ রায়। তিনি ছিলেন নবাব আলিবর্দি খাঁ-র দেওয়ান। প্রথমে বীরভূমের ভদ্রপুর গ্রামে এই পুজো শুরু হয়। কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ি তৈরি হওয়ার পর ভদ্রপুর থেকে কাঠামো নিয়ে এসে রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই থেকেই রাজবাড়ির দালানে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। সেই সময়কার কাঠামোতেই আজও দেবী দশভুজা তৈরি হয়ে আসছেন।
এই বাড়ির পুজোতে নবমীর দিন যজ্ঞ হয়, এটি এই পুজোর বিশেষত্ব। যজ্ঞ সম্পন্ন হলে পরিবারের সদস্যরা একসাথে যজ্ঞের ফোঁটা কপালে পড়েন। এরপর হয় অপরাজিতা পুজো। অপরাজিতা গাছের ডালকে হাতে বেঁধে পরিবারের প্রত্যেকে দেবীর কাছে নিজের নিজের পরমায়ু এবং সব বিষয়ে জয়লাভ করার জন্য প্রার্থনা করেন। আগে দশমীর দিন দেবীর বিদায়ের আগে ভাগীরথী নদীতে ময়ূরপঙ্খী নৌকা আসত। দেবীকে ওই নৌকায় চাপিয়ে বিসর্জন দেওয়া হত। এছাড়াও একজোড়া নীলকন্ঠ পাখি ছাড়া হত। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। ময়ূরপঙ্খী নৌকা এবং নীলকন্ঠ পাখি কোনোটাই এখন আর নেই।
তবে এখনও এই পুজোকে ঘিরে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে উৎসাহের অভাব নেই। পুজোর চারদিন সবাই এখানে ভিড় জমায়। কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ি একসময় মুর্শিদাবাদের শাসকদের আবাসস্থল ছিল। রাজবাড়ির এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, এটি বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি জীবন্ত উদাহরণ। আজকের দিনেও এই পুজো তার আদি রূপ ধরে রেখেছে।
Discussion about this post