পুজোর সাজে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। বাতাসে শিউলির গন্ধ। আর তেমনিই পুজোর গন্ধে মাতোয়ারা কিছু ঐতিহ্যময় বাড়ি। গোটা রাজ্য জুড়ে এমন অনেক বাড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। ঠিক তেমনই পূর্ব বর্ধমানের শহর গুসকরা। আর সেখানেই রয়েছে চোংদার বাড়ি। দুর্গা পুজোর প্রাচীনতা আজও বয়ে চলেছে এ বনেদি বাড়িতে। কথিত আছে, সম্রাট শের শাহের আমলে এ বাড়ির পুজো শুরু হয়। প্রায় ৪৫০ বছরের পুরনো এ পুজোয় বেঁচে আছে পরম্পরা। বর্তমানে ঔজ্জ্বল্য কমে আসলেও মহা সমারোহে আজও চলছে এ বাড়ির পুজো। চোংদার বাড়ির পুজোর এক বিশেষ রীতি আছে। এ বাড়ির পুজোর ঘট বিসর্জন হয় না। বরং আহ্বান করা হয় ঘটকে। এ এক অন্যরকম রীতি যা চট করে অন্য কোথাও খেয়াল করা যায় না।
গুসকরার জমিদার চতুর্ভুজ চোংদারের হাত ধরেই এই পুজো শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। জমিদার বাড়ির কেন্দ্রস্থলেই তৈরি হয় এই বিরাট দুর্গা মন্দির। শোনা যায়, একসময় কলকাতার নামী কোম্পানির নট্টবাবুরা গুসকরার এই বাড়িতে গিয়ে যাত্রাপালার আসর জমাতেন। এখন যদিও জীর্ণ দশা। খসে পড়ছে পলেস্তরা। তবুও পুজোর চারটে দিন যথেষ্ট ধুমধাম চলে। বাড়ির সব সদস্যদের হইচইতে মেতে ওঠে গোটা বাড়ি। আর দশমীতে রীতি মেনে হয় ঘট প্রতিষ্ঠা।
কথিত আছে, একসময় কামান দাগা হত। কিন্তু এখন তা আর হয় না। বর্তমানে বন্দুকে ফায়ার করে সন্ধি পুজো শুরু হয় বলে শোনা যায়। শাক্ত মতে মায়ের আরাধনা হয় এ বাড়িতে। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় প্রচুর গবাদিপশু মারা যায়। সেই থেকে বন্ধ মোষ ও ছাগ বলি। তারপর থেকে শুরু হয়েছে চালকুমড়ো বলির প্রথা। এ বাড়িতে ভোগ রান্না হয় প্রায় ৫১ থালার। বাড়ির মহিলারাই সাধারণত ভোগ রান্না করেন। এছাড়াও থাকে এলাকাবাসীদের পাত পেড়ে খাওয়ানো। প্রায় ৪৫০ বছরের এ পুজো সময়ের হিসেবে পুরনো হলেও, আজও তা নিজের মহিমায় নতুন।
চিত্র ঋণ – শুক্লা সেন, বঙ্গদর্শন
Discussion about this post