সাদা কাশের দোলায় বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে পুজো আসন্ন। দুর্গাপুজো নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে হবার এটাই সময়। আর বাঙালির পুজোর পাশাপাশি যেন নতুন করে ভেসে আসে বাংলার কিছু ঐতিহ্য। তার চেয়েও বরং বলা যায় কিছু ঐতিহ্যপূর্ণ পুজো। নানান প্রান্তের নানান পুজোর থাকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
প্রতিটি জেলার বিভিন্ন পুজোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে জনাইয়ের বাড়ুয্যে বাড়ির পুজো। হুগলি জেলার শ্রীরামপুর ডিভিশনের এলাকা জনাই। এলাকাবাসী অদ্ভুত টান অনুভব করে জনাইয়ের জমিদার বাড়ির পুজোর। এ পুজো যেমন পরিপূর্ণ ঐতিহ্যে তেমনই আভিজাত্যে। দুইয়ের মিশেলে প্রতি বছর জমে ওঠে এ বাড়ির পুজো। ইতিহাস বলে, এ পুজোর বয়স তিনশো বছরের বেশি।
এ পুজো শুরু হবার গল্পটা একটু অন্যরকম। অনেককাল আগে এ জমিদার বাড়িতে এক সাধু আসেন। শোনা যায়, তিনি বলেছিলেন যতদিন এ বাড়িতে পুজো হবে, এ বাড়ি সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। সেই থেকে শুরু হলো জনাইয়ের বাঁড়ুয্যে বাড়ির পুজো। আর সেই সাথে ওই সাধু দিয়ে গিয়েছিলেন একটা শিবলিঙ্গ। যে শিবলিঙ্গ আজও বাঁড়ুয্যে বাড়িতে পুজো পান ‘বানেশ্বর’ রূপে। প্রাচীন রীতি ধারা মেনে আজও একই ভাবে মা দুর্গার আশীর্বাদ রয়েছে এ পরিবারের ওপর।
আর প্রতিটি বনেদি পুজোয় চলে বলি। এ পুজোও তার ব্যতিক্রম ছিল না। নিয়ম মেনে চলতো ছাগ বলি। তবে এক সময়ে জমিদার শ্রী ত্রিপুরা বাঁড়ুয্যে স্বপ্নাদেশ পান ছাগল বলি বন্ধ করার জন্য। আর পরের দিনই পুজোর সময় ঘটে একটি অদ্ভুত ঘটনা। বলির ছাগল হঠাৎ হাঁড়িকাঠ ছেড়ে পালিয়ে এসে দাঁড়ায় ত্রিপুরা বাঁড়ুয্যের কাছে। সেদিনই পুজোর সময় থেকে পুরোহিতের আদেশে বন্ধ হয় ছাগবলি। আর সেইসাথে পরিবর্তন ঘটে দেবী মূর্তিতে। এ বাড়ির দুর্গা প্রতিমায় লক্ষ্মী আর কার্তিক একসাথে থাকে। অন্যদিকে একসঙ্গে থাকে সরস্বতী আর গণেশ। এই মূর্তিই আজও পুজো পেয়ে আসছে বাঁড়ুয্যে পরিবারের সদস্যদের থেকে।
Discussion about this post