সালটা ১৯২৮। অক্টোবরের শেষের দিক। কালা কানুন সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে লাহোরের মিছিলে তখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন লালা লাজপত রায়। ১৭ নভেম্বর ইংরেজ পুলিশের পাশবিক লাঠিচার্জে প্রাণ হারান লালা লাজপত রাই। আর তারপরেই প্রতিবাদের মশাল হাতে তুলে নিলেন ভগৎ। কমরেডের হত্যার প্রতিশোধ তাকে নিতেই হবে। ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন স্যান্ডার্সকে হত্যা করলেন ভগৎ। লাহোরে রটে যায় জন স্যান্ডার্সের হত্যাকারী এক অবিবাহিত শিখ যুবক। লাহোরে তখন থিক থিক করছে পুলিশ। হত্যাকারীকে খুঁজতে চলছে ইংরেজ পুলিশের কড়া নজরদারি।
বিপ্লবীর জন্য এই পরিস্থিতি সুবিধার নয় বুঝেই তিনি মনস্থির করলেন পালাবেন। অথচ তাঁর খোঁজেই পুলিশে ছয়লাপ গোটা লাহোর চত্ত্বর। তল্লাশী চলছে চাপদাড়ি আর পাগড়ি বাঁধা এক যুবকের। খুলে ফেললেন পাগড়ি, গালের ঘন চাপ দাড়ি ফেললেন কামিয়ে। লাহোর স্টেশনে পুলিশের নাকের ডগা দিয়েই দ্রুত বেগে হেঁটে যাচ্ছেন এক অল্প বয়সী দম্পতি। ক্লিন শেভড গাল, পরনে স্যুট-হ্যাট পরা হ্যান্ডসাম যুবক। তার সামান্য পিছনেই স্ত্রী-সন্তান এবং ভৃত্য। এমন সুপুরুষ কিনা হত্যাকারী! ফিরেও তাকালো না ইংরেজ পুলিশ।
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভগৎ সিং চেপে বসলেন কানপুরের ট্রেনে। ছদ্মবেশে লাহোর থেকে পালানোর সময় ভগতের স্ত্রী সেজেছিলেন দুর্গা দেবী আর ভৃত্য সেজেছিলেন রাজগুরু। ভগৎ সিং আজও শহীদ সম্মানে মানুষের মনে জীবিত, সেই সঙ্গে ভুললে চলবেনা দুর্গা ভাবীর কথাও। তিনি ছিলেন আরেক স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগবতী চরণের স্ত্রী। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভগতের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় চালিয়া যান সদ্য বিবাহিতা দুর্গা দেবী, সঙ্গে ছিল তাঁর তিন বছরের ছেলেও। একচুল বিচ্যুতিতে প্রাণ যেতে পারে জেনেও নিজের আদর্শ থেকে পিছ পা হননি দুর্গা দেবী।
Discussion about this post