দুর্গোৎসব, বাংলা সহ সারা বিশ্বের বাঙালির কাছে আবেগের মূহুর্ত। সময়ের স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে সারা বাংলা আজ নামী দামী থিমের পুজো ঘিরে মেতে উঠলেও, প্রাচীন সময় থেকেই সাবেকি বাড়ির প্রতি একটা অন্য আকর্ষণ কাজ করে বাঙালির মধ্যে। কলকাতার প্রায় প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে বহু এমন ঐতিহ্যবাহী সাবেকি বাড়ির পুজো। তবে তাদের মধ্যে কুমোরটুলির মিত্র বাড়ির পুজো অন্যতম। প্রাচীন এই পুজো কলকাতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সূত্রে জড়িত। জানেন কি! আজও মনে করা হয় মা দুর্গা মর্ত্যে এসে খেতে আসেন এই মিত্র বাড়িতে।
পশ্চিমবঙ্গের ব্যস্ততম শহর কলকাতায় অবস্থিত এই কুমোরটুলি অঞ্চল। তবে কুমোরটুলির কথায়, বাঙালির প্রথমেই মনে আসে মাটির তৈরীর দেব-দেবীর বিগ্রহের কথা। কুমোরটুলির শিল্পীদের অসামান্য শিল্পকলা আজও মন টানে দেশ সহ বিদেশের উৎসব প্রিয় বাঙালিদের। কুমোরটুলিতেই অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মিত্র বাড়ি। এই পরিবারে দুর্গোৎসবের জাঁকজমক, আড়ম্বরের কথা একাধারে ইতিহাস ও কিংবদন্তী। এই বাড়ির আদি পুরুষ হলেন গোবিন্দরাম মিত্র। ১৬৯৭ সালে ইংরেজরা যখন পাকাপাকি ভাবে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করেন। তখন ভারতীয় হিসেবে দ্বিতীয় ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন গোবিন্দরাম মিত্র।
জানা যায়, ঘোড়াগাড়ি চালানো প্রথম বাঙালী ব্যক্তিও ছিলেন তিনি। সেই সময়ই গোবিন্দরাম মিত্র কুমোরটুলিতে ৫০বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেন এই মিত্রবাড়ি। এই বাড়িরই উত্তর পুরুষ হলেন অভয়চরণ মিত্র। গোবিন্দরামের আমলে মিত্র বাড়িতে দুর্গাপূজা শুরু হলেও অভয়চরণের আমলেই তার জৌলুস বৃদ্ধি পায়। মিত্র বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে নানারকম স্বর্ণালঙ্কারের পাশাপাশি, রূপোর তৈরী পত্রে মুড়ে ফেলা হয়। আজও মনে করা হয়, স্বয়ং দেবী দূর্গা মর্ত্যে এসে জোড়াসাঁকো দাঁ বাড়িতে গয়না পড়ার পর খেতে যান এই মিত্র বাড়িতে। তাই মায়ের ভোগের আয়োজনের জন্য বাড়ির সকল মহিলারা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান মিত্র বাড়ির হেঁশেলেই।
প্রাচীন সময় থেকেই মিত্র বাড়িতে দেবীকে ভোগে অন্নভোগ দেওয়া হতনা। তার বদলে নিবেদন করা হত তিরিশ থেকে পঞ্চাশ মণ চালের নৈবেদ্য। এছাড়াও নানারকম মিষ্টি, গজা, নিমকি, লুচি, রাধাবল্লভী ইত্যাদি নিবেদন করা হত মা দুর্গাকে। ঐতিহ্যময় এই রীতি আজও অব্যাহত রয়েছে মিত্রবাড়িতে। এছাড়াও মিত্র বাড়ির দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ কুমারী পুজো। তবে এখানে পশুবলি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মা দুর্গা বিগ্রহ বিসর্জনের জন্য মিত্র পরিবারের আদি পুরুষদের বানানো ঘাটটি বর্তমানে ‘বাগবাজার ঘাট’ নামে পরিচিত। যেখানে আজ সাড়ম্বরে বহু বনেদি বাড়ি ও বারোয়ারির প্রতিমাও নিরঞ্জিত হয়।
Discussion about this post