অর্থের অভাবে স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি। কিন্তু বাংলা সাহিত্য আর বইয়ের নেশায় জীবনের ৭০ টি বসন্ত পার করেছেন বই দাদু। আজ শোনাবো বাংলাদেশের রংপুরের ২ টাকার বই দাদুর গল্প। রংপুর নগরের শহীদ জররেজ মার্কেটের একটি দোকানে বসেন ওমর শরীফ। দোকানটি তাঁর নয়। অন্যের দোকানে ভাগে বসেন, দোকান জুড়ে বইয়ের স্তূপ। বেশিরভাগ বই বাংলা সাহিত্যের প্রধান লেখকদের। রয়েছে বিদেশি লেখকদের বইও। গল্প সমগ্র, উপন্যাস, কবিতা ও আত্মজীবনীমূলক বইও রয়েছে তাঁর সংগ্রহে।
বই দাদু ওমর শরীফ ছেলেবেলায় টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বই কিনে পড়েছেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা। এরপর স্কুলের আঙিনা মাড়াননি। জীবিকার তাগিদে ব্যবসায় নেমেছেন, চাকরি করেছেন। কিন্তু বইয়ের নেশায় কিছুতেই থিতু হতে পারেননি। ৭১ বছর বয়সী ওমর শরীফকে রংপুর শহরের পরিচিত ব্যক্তিরা ডাকেন ‘বই দাদু’ বলে। বই পড়ার অদম্য ইচ্ছা থেকে পুরোনো বই সংগ্রহের নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। নানা উপায়ে বই সংগ্রহ করে তিনি বিশাল এক ভান্ডার গড়ে তুলেছেন। সেই ভান্ডার থেকে তিনি মানুষকে বই ভাড়া দেন। পড়া শেষে পাঠক তাঁকে বইটি ফিরিয়ে দিয়ে যান। এরপর সেই বই ঘুরতে থাকে এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের হাতে।
বইপ্রেমী ওমর শরীফের ভান্ডারে প্রায় পাঁচ হাজার বই রয়েছে। শুরুতে মাত্র দুই টাকা ভাড়ার বিনিময়ে বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করতে নেমে পড়েন। কিশোর, তরুণ থেকে শুরু করে সব বয়সের পাঠকই তাঁর কাছ থেকে বই নিয়ে পড়েন। তবে আগের মতো দোকানে পাঠকের ভিড় নেই। তথ্যপ্রযুক্তির প্রবাহে পাঠকের হাতের মুঠোয় বই পৌঁছালেও, হতাশ নন ওমর শরীফ। দুটো বাংলাকে ভালোবেসে ওমর শরীফ তার দোকানে এপার বাংলা, ওপার বাংলার সকল লেখকদের বই রেখেছেন। শৈশব থেকেই বইপোকা ওমর শরীফ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ দাশ সহ বাংলা কবি সাহিত্যিকদের অধিকাংশ বই শেষ করছেন বহু আগেই।
বই দাদুর কাছে জানতে চাইলাম, ঠিক কত লোক তার কাছ থেকে বই ভাড়া নিয়ে পড়েছেন? উত্তরে বললেন, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে সংখ্যাটা কয়েক লক্ষ। নিজের কাজ সম্পর্কে বই দাদু ওমর শরীফ বলেন, “বই পড়তে ভালো লাগে আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। কাজের টানে এই শহরে এসে এখানে থিতু হয়েছি বইয়ের প্রেমে। আমার কাছ থেকে বই পড়ে কেউ কিছু জানতে পারলে ভালো লাগে, আনন্দিত হই। মনের টানেই এই কাজ করছি। বেঁচে থাকি যদ্দিন এই কাজই করে যাবো।”
Discussion about this post