পর্যটক সম্ভবত দুই প্রকারের হয়। এক, সাইট সিইং প্রেমী। দুই, প্রকৃতির সৌন্দর্য ভোগী। প্রথম দলের মানুষরা ট্রেনের টিকিট কেটে, হোটেল বুক করে, গাড়ি ঠিক করেই নিশ্চিন্ত থাকেন। গন্তব্যে পৌঁছে পছন্দসই খাবার, চেনা টুরিস্ট স্পটগুলি ঘুরে ফিরে যারপরনাই খুশি হয়ে যান। আর দ্বিতীয় দলের মানুষরা আবার একটু আলাদা। তাঁদের ন্যূনতম পরিস্কার খাবার আর মাথা গোঁজার পরিচ্ছন্ন জায়গা পেলেই চলে যায়। যাতায়াতের পথটাই তাঁদের কাছে বিস্ময়ের। ঘুম থেকে উঠে লোভনীয় ব্রেকফাস্ট নয়, বরং নতুন গাছ-পাতা-ফুল, নদীর স্রোতের ধ্বনি, বা পাখির ডাক তাঁদের আনন্দ দেয়। তাঁদের আনন্দের স্থানটি যদি হয় বাংলারই সুন্দরী ডুয়ার্স, তবে তো কথাই নেই! সেই আনন্দেরই হদিশ দিচ্ছে ডুয়ার্সের রিসোর্ট ফরেস্ট ক্লাব।
এত হাজার হাজার রিসোর্ট আর হোমস্টের মধ্যে রিসোর্ট ফরেস্ট ক্লাব কোথায় অন্যরকম? রুচিসম্মত সাজানো ঘর, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সঙ্গে পাহাড়, জঙ্গল, অগুনতি পশুপাখি আর গা ছমছমে রোমাঞ্চের ছোঁয়া লেগে থাকে এই রিসোর্টের গায়ে। এক কথায় যাকে বলে ফুল প্যাকেজ। রিসোর্টের বারান্দা থেকে কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে চাক্ষুষ করা যাবে সম্পূর্ণ কাঞ্চনজঙ্ঘার ঐশ্বরিক দৃশ্য। রিসোর্টের ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা যাবে জন্তু জানোয়ারের আনাগোনা। কপালে থাকলে একটা দুটো বুনো হাতি বা লেপার্ডের ডাক শুনে ফেলতেও পারেন। ময়ূরের ডাক আর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আছেই।
এখন পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই রিসোর্টে পৌঁছবেন কীভাবে? খুব সহজ উপায়। ফরেস্ট ক্লাব রিসোর্টের সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন হল নিউ মাল জংশন। শিয়ালদা থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে সরাসরি পৌঁছনো যায় সেখানে, দূরত্ব ১৫ কিমি। গাড়ি নেয় ৫০০ টাকা, সময় লাগে আধ ঘণ্টারও কম। কাঞ্চনকন্যা না পেলে অন্য যেকোনো ট্রেনে চলে যাওয়া যায় নিউ জলপাইগুড়ি, সেখান থেকে গাড়িতে রিসোর্টে পৌঁছতে পড়বে ১৮০০ টাকা, সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। রিসোর্টে বলা থাকলে এই গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে যায় আগেই। চা বাগানের মধ্যে দিয়ে রিসোর্টে পৌঁছতে হয়। রিসোর্টের চারপাশে দেড়-দুই কিলোমিটার পর্যন্ত নেই কোনো জনমানুষের উপস্থিতি। ফলে ‘নিরিবিলি’ শব্দটি শুধু এখানে একটি শব্দই নয়, ভীষণ বাস্তব।
থাকা আর খাওয়ার ক্ষেত্রে দুইরকম ভাবে রিসোর্ট বুকিং করা যায়। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, বিকেলে চা-জলখাবার আর ডিনারের প্যাকেজ শুরু মাথাপিছু ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। আর শুধুমাত্র থাকতে চাইলে ঘরের ভাড়া শুরু ১০০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত, সেক্ষেত্রে কমপ্লিমেন্টারি পাওয়া যাবে ব্রেকফাস্ট। রিসোর্টের কর্ণধার সায়ন চ্যাটার্জী অবশ্য বলছেন, “এই রুমের ভাড়া নেগোশিয়েবল। প্রতিটি ঘরেই আধুনিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে, রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড টেলিভিশন এবং ২৪ ঘন্টা ওয়াইফাইয়ের সুবিধা, গরম জলের ব্যবস্থা। স্থানীয় কর্মচারীদের আন্তরিক ব্যবহার এবং পারদর্শী শেফের রান্না আপনার মন কাড়বেই। একবার এলে বারবার ফিরে আসতে মন চাইতে বাধ্য।’’ রিসোর্ট থেকে এক বা দুইদিনের মধ্যে ঘুরে আসা যায় লাভা, রিশপ, সেভেন পয়েন্ট প্রভৃতি জায়গা। করে ফেলা যায় গোরুমারা বা চাপরামারির জাঙ্গল সাফারি। এসবের জন্যেও একটু কথা বলে নিতে হবে সায়ন বাবুর সঙ্গেই। শহরের কোলাহল মুক্ত, জঙ্গলের ঘ্রাণের মধ্যে নির্জনে কাটানোর জন্য এই রিসোর্ট, ভ্রমণ ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য আদর্শ জায়গা।
যোগাযোগ – 9831952441, [email protected]
Discussion about this post