ধরুন আপনি একজন অপরাধী। আর আপনি দিনদুপুরে বেরিয়েছেন চুরি করতে। কাজটা কি সহজ হবে? উত্তরটা সবারই জানা। নাহ, সহজ মোটেই হবে না। কারণ যখন আপনাকে চারপাশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে, আপনি অপরাধ করতে পারবেন না। তো পারবেন কখন? যখন আপনাকে দেখার কেউ নেই। নেই ভ্রূক্ষেপ দেওয়ার মত কেউ। তাই সঠিক সময় অবশ্যই রাত, অর্থাৎ অন্ধকার। আর করোনা নামক অন্ধকারে এই মূহূর্তে যখন পৃথিবী আচ্ছন্ন, তখন তারই সুযোগে বেড়ে যাচ্ছে অপরাধ প্রবণতা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। কীভাবে? চলুন, শোনা যাক সেই গল্পই।
ইউরোপের এক দেশ গণতান্ত্রিক হাঙ্গেরি। ভিক্টর অর্ব্যন, দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেই নিজেকে ‘জরুরী ক্ষমতা’ প্রদান করেন। তার মানে এই ক্ষমতার ভিত্তিতে তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই ক্ষমতা তিনি যতদিন চান, ততদিন নিজের কাছে কুক্ষিগত রাখতে পারেন। এক কথায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা খর্ব করা দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম দেশ হল এই হাঙ্গেরি। কিন্তু কোথায় প্রতিবাদ? কোথায় মিছিল? কোথায় স্লোগান? কিছুই নেই। কারণ মানুষের এখন সবথেকে বড়ো ভীতি ‘কোভিড-১৯’। তাই সুবিচার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এগুলো এখন মানুষের কাছে শুধুমাত্র কয়েকটা বর্ণসমষ্টি মাত্র।
এবার নজর ফেরানো যাক এশিয়ার মহাদেশের ছোট্ট দেশ আজারবাইজানের দিকে। শুধুমাত্র কোভিড-১৯ মহামারীর অজুহাতে সেখানকার সরকার বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী ও কর্মীদের জেলে ভরে দেয়। জর্ডন দেশটির সরকার সেখানকার সমস্ত সংবাদপত্র বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি হিসেবে কারণটা খুবই সোজা। সংবাদপত্রের মধ্যে দিয়ে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে জর্ডনকে অনুসরণ করেছে ইয়েমেন, ওমান, ইরান এবং মরক্কো। কিন্তু আদৌ কি সংবাদপত্রের মাধ্যমে মারণ রোগ ছড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? গবেষণায় কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা প্রমাণিত হয়নি। সংবাদপত্র শুধুমাত্র তথ্য ও সংবাদই ছড়াতে পারে।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, কিছু দেশ এই মহামারীকে ব্যবহার করছে শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে যা তারা কখনোই ফিরিয়ে দেবে না। কিন্তু এতে ভ্রূক্ষেপ আছে কতজনের? কারোরই নেই। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, পরিবেশ থেকে মানবাধিকার, সবকিছু থেকেই গোটা পৃথিবী মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে। তাই এটাই সুবর্ণ সুযোগ। অপরাধীদের কাছে অপরাধ করার, একনায়কের কাছে তার ক্ষমতা দখল করার এটাই সঠিক সময়। গণতন্ত্র আজ মহামারী নামের অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। তাই শুধু বাড়ির ভেতর থাকলেই দায়িত্বটা শেষ নয়। মহামারী একদিন ঠিকই চলে যাবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার একবার হারিয়ে গেলে প্রতিবাদ করার জন্য পাশে কাউকে পাওয়া যাবে তো? প্রশ্নটা রেখেই হয়তো বিদায় নেবে সূদুর চিন থেকে আসা এই মারণ ভাইরাস।
Discussion about this post