ক্রিসমাস বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টানদের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ধর্মীয় আয়োজনে অংশ না নিয়েও বড়দিনের আনন্দ-আয়োজনে অংশগ্রহণ করে থাকেন সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ। বাংলাদেশে শতকরা মাত্র ০.০৪ জন মানুষ খ্রিস্টান। তা সত্ত্বেও এখানে ক্রিসমাস উদযাপিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই। সপ্তদশ শতকে পর্তুগীজদের মাধ্যমে এই অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার হয়। ১৫৯৯ সালে প্রথম চার্চ তৈরি করেন ওরাই নামের এক পর্তুগীজ। চার্চটি বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোরের কালীগঞ্জে অবস্থিত। ঢাকার কাকরাইলে সবচেয়ে বড় গির্জাটি অবস্থিত।
বাংলাদেশে ক্রিসমাস পালন করা শুরু হয়েছে আমেরিকারও আগে। তথ্য বলছে, মার্কিন মুলুকে ১৮৭০ সালে ক্রিসমাসের দিনটিতে ছুটির দিন হিসেবে পালন করা শুরু হয়। কিন্তু এখানে প্রথম বড়দিন পালন করা হয় ১৬৬৮ সালে। ধর্মীয় স্থানগুলোতে খুব সুন্দর সাজগোজ লক্ষ করা যায় ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে। খ্রিস্টানরা বিভিন্ন রঙিন আলো এবং কাগজ দিয়ে সাজায় পুরো বাড়ি। নতুন রঙিন পোশাক পরে ক্রিসমাস ক্যারলটিতেও যোগ দেয় তারা। চার্চগুলো ক্রিসমাসের আলোয় আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ক্রিসমাস ক্যারল বা ক্রিসমাসের গানের পাশাপাশি গাওয়া হয় ভাটিয়ালি গান, কীর্তন, এমনকি রবীন্দ্রসঙ্গীতও। এরকম একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত হলো- ‘আজি শুভ দিনে পিতার ভবনে অমৃত সদনে চলো যাই’। তবে মহামারী পরিস্থিতিতে প্রচুর মানুষ একসঙ্গে উপাসনা কিংবা অনুষ্ঠানে হাজির থাকার ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে বিধি-নিষেধ।
বড়দিনের আয়োজনে খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় রীতির সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশীয় সংস্কৃতির নানা উপাদান। ক্রিসমাসের খাবারে বিশেষ কেকের পাশাপাশি থাকে পিঠে-পুলি, পোলাও, মাংস ও বিরিয়ানী। করোনা সতর্কতা মাথায় রেখেই প্রস্তুত ঢাকা। লক্ষ্মীবাজার, আরমানি টোলা, সায়েদাবাদ, জনসন রোড, তেজগাঁও, মিরপুর, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, কাকরাইল, সায়েদাবাদ, গুলশান, বনানী, ইস্কাটন প্রায় সব এলাকার গির্জাগুলোই ইতিমধ্যেই বড়দিনের আয়োজনকে সফল করার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
বছর বড়দিনে গির্জাগুলোতে এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও আনসার ভিডিপি, বিজিবি মাঠে কর্মরত থাকবেন। ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলসহ বিভিন্ন ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া স্কাউটস, বিএনসিসি ক্যাডেটস, রেড ক্রিসেন্ট সহ বিভিন্ন সামাজিক ও যুব সংগঠনগুলোও এদিন আয়োজনকে সফল করতে নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বড়দিনের আগের এই নিরাপত্তার তোড়জোড় নিয়ে সন্তুষ্ট বংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।
Discussion about this post