আকাশে সাদা মেঘ আর কাশফুলের দোলা বুঝিয়ে দিচ্ছে পুজো এসে গেছে। আর বাঙালির পুজো মানেই যে দুর্গা পুজো সে কথা বলাই বাহুল্য। বাড়ির চৌকাঠে পুজো এসে দাঁড়ালে ব্যস্ততার পারদ চড়তে থাকে। ঠিক এমনই এক ব্যস্ত পুজোর বাড়ি নদিয়ার দেবগ্রাম রাজবাড়ি। পূর্ণচন্দ্র চৌধুরী মুঘল ফৌজ থাকাকালীন নদিয়ার দেবগ্রাম এলাকার এ অংশের ভাগীদার হন। এ জমিতেই নির্মাণ করা হয় আজকের রাজবাড়ির প্রাসাদ। আর সে প্রাসাদ সম্পূর্ণরূপে আগের মত না থাকলেও পুজো কিন্তু চলে আগের মতই। পূর্ণচন্দ্র রায় চৌধুরীর পুত্র ছিলেন সদাশিব রায় চৌধুরী। তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে গঙ্গাবক্ষে এক দুর্গা মূর্তির কাঠামো ভেসে এসেছে। সেই স্বপ্ন থেকেই এ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। আর সেই দেবী মূর্তি আজও রাজবাড়ির নাটমন্দির আলো করে আছে।
এ বাড়ির দুর্গা প্রতিমার বিশেষত্বই আলাদা। মূর্তির দুই ভাগে ভাগ করা চালচিত্রের চওড়া অংশের ওপরের দিকে লক্ষী সরস্বতী। মূর্তির নীচের দিকে কার্তিক আর গনেশ। মাঝখানে সিংহের পিঠ থেকে চৌদ্দ পোয়ার দুর্গামূর্তি। লক্ষী, সরস্বতী, গণেশ আর কার্তিকের মূর্তিগুলো মাপে আট পোয়া করে। এই রাজপরিবারের কূলদেবতা বাবা বুড়োশিব আর মা ভুবনেশ্বরী। নিজের আসনে অধিষ্ঠিত থেকেই মা ভুবনেশ্বরী পুজোর সময়ে দুর্গা মূর্তির সাথেই পূজিতা হন।
ষষ্ঠীতে বোধন হয়ে পুজোর শুরু হয়। তারপর সমাগমকে দোসর করে এগিয়ে চলে পুজো। কূলদেবী থাকার কারণে পশুবলি নিষিদ্ধ। তবে নবমীর দিন আখ আর চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়।কিন্তু পুরনো প্রাসাদের এখন ভগ্নদশা। তবু তার মধ্যে দশটি ঘর টিকে আছে। যদিও সে ঘরের মানুষরা বাইরেই থাকেন। তবে পুজোর সময়ে তারা এক জায়গায় এসে থাকেন। এ বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম নিষ্ঠা মেনেই এ পুজো আজও করে আসছে। চাইলে আপনি পুজোর সময়ে চলে আসতেই পারেন এ রাজবাড়িতে। রানাঘাট পাণ্ডেপাড়া থেকে টোটো ধরে পৌঁছে যাবেন দেবগ্রাম রাজবাড়ি।
ছবি – প্রতীকী
Discussion about this post