কংক্রিটের সভ্যতায় আসক্ত মানুষ এখন তার চারপাশটাকেই নিজের ভাবে। সেখানে অন্য কোনও প্রাণীর বিচরণ সে একদম সহ্য করে না, যা একরকম স্বার্থপরতারই পরিচয়। তারা একবারও ভাবেনা এই গ্রহ শুধুই মানুষের একার নয়, সমগ্র প্রাণী জগতের সেখানে অধিকার রয়েছে। এই বোধ জাগার আগেই ঘটে যায় কিছু কষ্টদায়ক মর্মান্তিক ঘটনা। তেমনই একটি বিশ্রী ঘটনার সাক্ষী করতে চলেছি আপনাদের।
মেছো বিড়ালের নাম শুনেছেন আশা করি। গায়ে বাঘের মতোই ডোরাকাটা দাগ। দেখতে এক্কেবারে চিতা বাঘের মতো। এমনই এক মেছো বিড়াল ভুট্টার গাদায় তার সদ্যজাত তিন ছানা নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল শান্তিতে। ঠিক তখনই ভুট্টার ক্ষেতের মালিক আসেন জায়গাটি পরিষ্কার করতে। ভুট্টার খড় সরাতেই গর্জে ওঠে মা মেছো বিড়াল। মালিক তখন ভয় পেয়ে পালায়। পরে আরও জনা তিন লোক এনে তাড়াতে উদ্ধত হয় বিড়ালটিকে। কিন্তু মা হয়ে বাচ্চাদের এমন বিপদের মুখে ফেলে সে যায় কীভাবে! তাই ছানাগুলোকে আরও আগলে বসে মেছো বিড়ালটি। কিন্তু তর সইল না ভুট্টা ক্ষেতের মালিকের। পেছন থেকে ওর মাথায় মারল এক বাড়ি। ব্যস সব শেষ! নিমেষের মধ্যে লুটিয়ে পড়ে মা বাঘরোলটি। আঘাত এমনই জোর ছিল যে দামুড়হুদা বন বিভাগ তাকে উদ্ধার করে দর্শনা প্রাণীসম্পদ বিভাগে চিকিৎসা দিয়েও বাঁচাতে পারিনি। হয়ত আর কিছুটা সময় পেলে সে বাচ্চাগুলোকে মুখে বয়ে নিয়েই চলে যেথ। কিন্তু সে সুযোগ আর পেল কই!
অনাথ তিনটি ছানা এখন খুলনার বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আওতায়। বাচ্চাগুলো নিয়ে এসে বন বিভাগে রাখা হয় এবং খুলনার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানানো হয়। এই মেছো বিড়াল একসময় জলাভূমিতেই বাস করত। মাছই ছিল তাদের খাবার। কিন্তু বর্তমান নগরায়ণের যুগে তারা একরকম ভিটেমাটি ছাড়া। বিপদগ্রস্ত প্রাণীর তালিকায় এদের নাম নহু আগেই চলে এসেছে। যেকয়টি বেঁচে রয়েছে তাদের যত্ন নেওয়াটা খুবই দরকার বলে মনে করেন বনদপ্তর কর্তারা। নইলে বেশিদিন আর বাকি নেই যখন মেছো বিড়াল এক বিলুপ্ত প্রজাতি হিসেবেই পরিচয় পাবে।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – বখতিয়ার হামিদ
Discussion about this post