রামধন মিত্র স্ট্রিটে পা রাখলেই পুরনো স্মৃতির গলি যেন সেজে ওঠে নতুন আলোয়। সে আলো পুজোর। বলা ভালো সে আলো মহালয়ার ভোরের। হলুদ রঙের একটা বিশাল বাড়ি। আর তার গায়ে সাদা ফলকে লেখা, স্বর্গীয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সেই সাথে তাঁর জন্ম মৃত্যু তারিখ। আর নীচে পাথরে খোদাই করা “এই বাড়িতে আমৃত্যু বাস করেছেন বেতারে মহিষাসুরমর্দিনীর সর্বকালজয়ী অন্যতম রূপকার এই সুসন্তান।” এ বাড়ির ছাদের পাশ দিয়ে চার পাঁচ ধাপের সিঁড়ি পেরিয়ে একটা ঘর। যে ঘরের বর্তমানের বাসিন্দা সুজাতা ভদ্র। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মেয়ে তিনি। সেই ঘরে আগের আসবাবের সঙ্গেই আজও রয়েছে সেই রেডিও। মহালয়ার ভোরে এ রেডিও খোলা হয়। গোটা বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মহিষাসুরমর্দিনীর সেই দৃপ্ত কন্ঠ।
শোনা যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্র পাঠ শুনে সবাই ভাবতেন তিনি ভীষণ ঈশ্বর বিশ্বাসী। কিন্তু তিনি কখনো বাড়িতে পুজো দিতেন না। তাঁর মতে, বিশ্বাস থাকবে মনে তাতে লোক দেখানোর কিছু নেই। মহিষাসুরমর্দিনীর সরাসরি রেডিও সম্প্রচারের সময়ে রাত দুটোর সময়ে গাড়ি আসতো অফিসের। তবে শেষদিকে আর যেতে পারতেন না তিনি। তবে ১৯৭৬ সালেও অফিসে যাননি তিনি। সেবার রেকর্ডিং হয়েছিলো উত্তম কুমারের স্বরে। তাতে সুর দিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তবে সেই প্রথম, সেই শেষ। জনতার বিক্ষোভে অবশ্য ষষ্ঠীর দিন রেডিও থেকে আবারও সম্প্রচার করা হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া।
সুজাতা দেবীর কথায় জানা গিয়েছে, শেষ বয়সে এসে স্মৃতিভ্রংশ হয়েছিলো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের। তাঁর ঘরে মহালয়া চললেও তিনি টের পাননি। তাঁর অনেক স্মৃতিই হারিয়ে গেছে। তবে রয়ে গেছে তাঁর কন্ঠ। যে কন্ঠ আজও অনায়াসে মহালয়ার ভোরে ছুঁয়ে যায় বাঙালি হৃদয়। গোটা ভোর জুড়ে গম গম করে ওঠে “অশ্বিনের শারদপ্রাতে…”
চিত্র ঋণ – দেবাশিস ঘোষ
Discussion about this post