জাতীয় চলচ্চিত্রের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বাংলার চলচ্চিত্র। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পর বাংলা সিনেমা জগতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। যা ছিল বাংলা সিনেমার ‘সুবর্ণ যুগ’। বাংলা সিনেমার এই যুগ যাদের হাত ধরে শুরু হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, ও মৃণাল সেন। আবারও জাতীয় স্তরে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করলেন পিছিয়ে পড়া আদিবাসী সমাজের মেয়ে ডগর টুডু। ১২ তম দাদাসাহেব ফালকে ২০২২ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
ডগর টুডুর বাড়ি পুরুলিয়ার মানবাজার-১ ব্লকে। মাত্র ২২ বছর বয়সেই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ডগর টুডু। অভিনয়ের পাশাপাশি ডগর একজন প্রতিষ্ঠিত গায়িকাও। সাঁওতালী বিনোদন জগতে তিনি যথেষ্ট পরিচিত। পরিচালক পল্লব রায়ের হাত ধরে মুক্তি পায় সাঁওতালি ছবি ‘আশা’। উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জের দক্ষিণ সোহারই গ্রামের একটি অনাথ আশ্রমের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে আশা এই সাঁওতালি চলচ্চিত্রটি। ছবিতে রয়েছে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন আদিবাসী মেয়ের অসম জীবন যুদ্ধের লড়াই। সমাজের চোখে যার অস্তিত্ব মূল্যহীন। হাজার প্রতিকূলতা উপেক্ষা তার জীবনের সফলতার গল্পই ‘আশা’। গত ২৯ এপ্রিল ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল ‘আশা’। সেখানে ডগরের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন সকলে। এই ছবিতে অভিনয়ের সূত্রেই সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন ডগর টুডু।
ডগর টুডুর এক সহপাঠীর মতে, “আমাদের নাটকের সংগঠন “থিয়েটার জঙ্গলমহলে” প্রথম বাংলা নাটকে অভিনয় করে ডগর। অসাধারণ প্রতিভা, সুন্দর গান করে। রবীন্দ্র সঙ্গীত নিজেই সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদ করে, কী যে সুন্দর গাইত। আজ বড় আনন্দ হচ্ছে,ভীষণ গর্ব হচ্ছে আমাদের ছাত্রী, আমাদের সহ অভিনেত্রী ডগর আজ সিনেমা শিল্পের সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত। গর্ব হচ্ছে ওর সঙ্গে একসময় মঞ্চ শেয়ার করেছি।” আধুনিকতার যুগেও সমাজের বিভিন্ন স্তরে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা আজও পিছিয়ে রয়েছে। তাই তো এত বড় পুরস্কার পাওয়ার বেশ কিছু সময় পরেও মূলধারার সংবাদমাধ্যম গুলির মধ্যে তেমন উৎসাহ চোখে পড়েনি ডগরকে নিয়ে। আসলে ডগর টুডুদের লড়াইটা চিরকালই খাড়াই পাহাড়ে ওঠার মত।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – অনির্বাণ বেরা
Discussion about this post