অমানবিকতা ও বর্বরতার এক চূড়ান্ত নিদর্শন! বাড়ির পোষ্যকে রাস্তায় ফেলে পালাল মালিক। খোদ কলকাতার বুকেই আনন্দপুরের কাছে বাসন্তী হাইওয়ের ধারে প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে বাঁধা পড়ে ছিল এক পোষ্য কুকুর। জাতে সে নামি-দামী এক মহিলা জাপানিজ ম্যাস্টিফ। হাইওয়ের ধারের এক বটগাছের গুঁড়ির সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে তাকে ফেলে পালায় তার মালিক। তারপর থেকেই চলছিল মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। তবুও নিজের জীবনশক্তির জোরেই বেঁচে ছিল কুকুরটি। একসময় স্থানীয় মানুষের নজরে আসে সে। এপ্রিলের শেষে জাপানিজ ম্যাস্টিফটিকে উদ্ধার করেন যাদবপুরের বাসিন্দা সন্দীপন মুখার্জী। এ কাজে তিনি পাশে পান সুমন গৌতম, শান্তনু মুখার্জী, দীপাঞ্জন ইজাদার প্রমুখকে।
আশেপাশের স্থানীয় কুকুর আর পোকামাকড়ের আক্রমণে কুকুরটির লেজ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। উদ্ধারের পর ম্যাস্টিফটিকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেন সন্দীপন। বিগত কয়েক বছর ধরেই রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানো ও চিকিৎসার কাজ করে আসছেন তিনি। ‘ডেলি নিউজ রিল’-কে ফোনে জানালেন, কুকুরটির লেজের হাড়ের অংশ ভেঙে গিয়েছিল। সেখানে ম্যাগট জাতীয় পোকার দ্বারা সংক্রমণের সৃষ্টিও হয়। পশু-চিকিৎসক ডাঃ শশাঙ্ক ত্রিপাঠীর সাহায্যে প্রথম দিনই ম্যাগটগুলি পরিষ্কার করা হয়।বর্তমানে কুকুরটির অনেকটাই সেরে উঠলেও, তার টিক ফিভার রয়েছে। হিমোগ্লোবিন কম থাকায় মাঝে মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ছে সে। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলবে বলেও জানা গেছে সন্দীপনের তরফে। এখনও পর্যন্ত ১৯ হাজার খরচ হয়েছে কুকুরটির চিকিৎসায়। সন্দীপনের বন্ধুরাও তাঁকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কুকুরটিকে ওইভাবে রাস্তার মধ্যে ফেলে কেন পালাল তার মালিক? সন্দীপন ও পশু-চিকিৎসকটি কিন্তু অন্যরকম এক আশঙ্কা করছেন। কুকুরটির বয়স মাত্র চার। এর মধ্যে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ বার ‘ব্রিড’ করানো হয়ে গেছে তার। এমনকি গত দেড়-দু’মাস আগেও নাকি ‘ব্রিডিং’ হয় তার, এমনটাই ধারণা চিকিৎসকের। কিন্তু ইদানীং তার ইউটেরাসে পায়োমেট্রির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলতঃ কুকুরটির পক্ষে আর ‘ব্রিড’ করা সম্ভব নয়। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে, যেহেতু সে আর বাচ্চা দিতে পারবে না তাই মালিকের তাকে আর কোনও কাজে লাগবে না। ঠিক সেই কারণেই পোষ্যকে ফেলে পালিয়েছে নিষ্ঠুর সেই মালিক। সন্দীপনরা এখন হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন সেই বর্বরোচিত মালিকটিকে। সন্দীপন আরও জানালেন গত সোমবার তাঁরা আহত অবস্থায় থাকা একটি ডোবারম্যান কুকুর উদ্ধার করেছেন। বাচ্চা ডোবারম্যানটিকে আনতে যারা সাহায্য করেছেন তাঁরা হলেন অতনু মজুমদার, প্রিয়াঙ্কা শ্রদ্ধা দাস। আর যে শেল্টারে রেখে ওর ট্রিটমেন্ট করতে সাহায্য করছে তার নাম গড়িয়া নিরাময় ফাউন্ডেশন।
ওরা অবলা, কথা বলতে পারে না। মুখ ফুটে কিছু চাইতেও পারে না। কিন্তু মনের ভাব ঠিকই প্রকাশ করতে পারে। সারাজীবন নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা করে যাওয়ার পরও ঠিক এই পরিণতিই কি অপেক্ষা করে থাকে অবলা পোষ্যগুলির জন্য? জীবনের সবটুকু নিংড়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে চলে যায় তাদের মালিক। তবু আজও সেই মালিকের পথ চেয়ে আশায় বসে থাকে তারা। চায় শুধু আশ্রয় আর একটু ভালবাসা। সেটুকুও কি তাদের প্রাপ্য নয়? এই অমানবিক, নিষ্ঠুর মালিকগুলির আদৌ কোনও কঠিন শাস্তি হবে কি? এই সব প্রশ্নের উত্তরের আশায় এখনও অপেক্ষা করে যান সন্দীপনরা!
Discussion about this post