গরুকে হিন্দুরা মা জ্ঞানে পুজো করে। হিন্দু ধর্মে গরু পবিত্র দেবতা জ্ঞানে পূজিত। তবে এখানে ঠিক ধর্ম নিয়ে আলোচনা করছি না। আজ বরং একটু অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হোক। আজ্ঞে হ্যাঁ, শুনলে অবাক হবেন, আফ্রিকার এমন এক আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে যারা গরুকে দেবতার আসনে বসায়। কী! কিছুটা অবাক হলেন তো! আসুন তবে একটু সেই বিষয়েই আলোকপাত করা যাক; কেমন তাদের গরুপ্রেম, কেমন তাদের জীবনযাপন!
২০১১ সালের ৯ জুলাই গণভোটের মাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে আফ্রিকার এক নতুন দেশ। বহু রক্তের বিনিময়ে তারা এই নতুন সূর্য ,স্বাধীন সূর্য দেখতে পেয়েছে। এ বাবা, দেশটির নাম বলতেই তো ভুলে গিয়েছি। দেশটি হল দক্ষিণ সুদান, যা বহু রক্ত ঝরিয়ে সুদান থেকে আলাদা হয়েছে। সেদেশের এক বিশেষ আদিবাসী জনগোষ্ঠী দক্ষিণ সুদানের সেন্ট্রাল ইকুয়েটরিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা। এরাই ‘মুন্ডারী’ আদিবাসী নামে পরিচিত, মূলতঃ রাখাল শ্রেণীর মানুষ।
ভাবলে অবাক হবেন এত রাজনৈতিক উত্থান পতন তাদের কোনোভাবেই বিচলিত করেনি। বরং তাদের ভাবনা তাদের গৃহপালিত পশু গরুকে নিয়ে। নিজেদের প্রাণ যায় যাক কিন্তু তাদের গরুর যেন কোনো ক্ষতি না হয়। এমনকি তাজ্জব হওয়ার মতো যে তারা তাদের এই গৃহপালিত পশুর রক্ষায় সারাদিন সারা রাত বন্দুক নিয়ে পাহারা দেয়। মূলতঃ ‘আনখল- ওয়াতুসি’ নামের এক প্রজাতির গরু প্রতিপালন করে থাকে তারা, যাকে ‘গবাদি পশুর রাজা’ বলা হয়। এই প্রজাতির গরু প্রায় ৮ ফুট লম্বা হয় এবং এর বাজার দর প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু এত দামী হওয়ার সত্ত্বেও তারা কিন্তু এই গরুকে বাণিজ্যিক রূপে কখনোই ব্যবহার করে না। আফ্রিকার বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অনেক গবাদি পশু প্রতিপালন করে থাকলেও সমস্ত পরিসংখ্যানকে ছাপিয়ে শীর্ষস্থানের দখল নিয়েছে এই মুন্ডারী জনগোষ্ঠীর গরুপ্রেম।
এমনকি এই ‘আনখল- ওয়াতুসি’ প্রজাতির গরুকে মুন্ডারীরা দেবতা জ্ঞানে পুজোও করে। গরু তাদের হাঁটাচলার সঙ্গী, পরিবারের ঘনিষ্ট সদস্য, রোগ প্রতিষেধক, মহিমান্বিত সম্পদ। এক কথায় উত্তম বন্ধু – যা শুধুই তাদের সম্পদ নয় বরং জীবনীশক্তির চালক ও বাহকও বটে। এরা গো-মূত্রও পান করে। এছাড়াও গরুর গোবর তারা রান্নার কাজে ব্যবহার করে। এর থেকে যে কালো চাঁই তৈরি হয় সেটি তারা জীবাণুনাশক হিসাবে ব্যবহার করে। প্রচন্ড রোদের তেজ থেকে নিজেদের ত্বককে রক্ষা করতেও কাজে লাগে এই চাঁই। শুনলে অবাক হবেন যে এই ‘আনখল-ওয়াতুসি’ খুব আদুরে প্রজাতি হওয়ার জন্য তারা রোজ দু’বার করে শরীর মালিশ করে দেয়। গোবরের ছাইকে পাউডারের মতো তাদের শরীরে লেপে দেয় যাতে কোনো জীবাণু ক্ষতি করতে না পারে। যে স্থানে গরু রাখা হয় সেই স্থানের চারিদিকে সারা রাত কারুকার্য করে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয়। এমনকি তারা প্রতিদিন রাতে তাঁদের প্রিয় গবাদি পশুর সঙ্গে একসাথেই ঘুমায়। সব শেষে এটুকুই বলার যে, পশুর প্রতি এই প্রেম-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা তাদের অনেক উঁচু স্থানে বসিয়েছে।
Discussion about this post