শীতের আমেজ মানুষকে বেশ নস্টালজিক করে তুলতে পারে। রাতে লেপের নীচে শুয়ে তুলোর গন্ধ বয়ে আনে অন্য স্মৃতি। হঠাৎ করে কানের কাছে বেজে ওঠে বশীভূত হয়ে যাবার মত সুর। তবে এ সুর কথিত কোনো যন্ত্রের নয়। তবু একে ছেলেবেলার একপ্রকার বাজনা বলা চলে। আর বাজনদাররা পরিচিত ‘ধুনুরি’ নামেই।

এমন বাঙালি খুব কম যারা প্রতি বছর লেপ কিনতেন না। শীতের আমেজকে উপভোগ করতে রীতিমত সহায়তা করতেন ধুনুরিরা। দুপুর বেলা হাঁক পেরে যেতেন ‘লেপ বানাবে?…’ এ সুর বড় মন কাড়া। যেন নেশা লেগে যায়। বাড়িতে কোনো ছোটো বাচ্চা থাকলে তাকে ভাত খাওয়াতে গিয়ে দেখানো হতো ধুনুরিদের। তবে বর্তমানে তারা প্রায় অদৃশ্য। কিছু পেশাও বিলুপ্ত ঐতিহ্য হয়ে থেকে যাচ্ছে যেন!

ব্ল্যাঙ্কেটের আরামে তলিয়ে গেছে লেপ তৈরির এই পেশা। গ্রাম বা মফস্বল এলাকায় জাঁকিয়ে শীত পড়লেও দুপুরে শোনা যায় না ধুনুরিদের সুর। তাদের সাথে তানপুরার মত এক ধরনের যন্ত্র থাকতো। সে যন্ত্রের একমাত্র কাজ তুলো ধোনা। আর এই কাজ থেকেই পেশাদারদের পরিচিতি ধুনুরি নামে। এ যন্ত্র থেকে গ্যাংগাও গ্যাংগাও ধরণের এক আওয়াজ সুরের মত বেজে যেতো ক্রমাগত। আর তার চারপাশ জুড়ে উড়ে বেড়াতো তুলো।
আজ আর ‘দাও ফিরে সে ছেলেবেলা’ বলে চিৎকার করলেও তা ফিরে আসার নয়। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে হাতে গোনা কয়েকজন ধুনুরির দেখা মিললেও মিলতে পারে। নতুন বছরে লেপ জুড়ে নতুন ডিজাইনের আনন্দে বর্তমানের মানুষ সামিল হতে পারবে না আর। দুপুর রোদে ধুনুরিরা তাদের ওই যন্ত্র নিয়ে একবার গাঁট হয়ে বসলে সহজে নড়তেন না। তাদের ঘিরে জমে ওঠা ভিড় আজ কুয়াশার মত। তবু কিছু স্মৃতি ভিড় করে আসে। ভবিষ্যতে হয়তো ‘ধুনুরি’ শব্দটা অভিধানেই রয়ে যাবে কেবল।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – News Click







































Discussion about this post