জগন্নাথ যাবেন মাসির বাড়ি। দাদা বলরাম, বোন সুভদ্রার সঙ্গে এক বছর পর রথযাত্রার আয়োজন। নগরের শোভাযাত্রায় বেরোবেন, অথচ ভক্তদের ভিড় হবে না, তা কি সম্ভব! আমরা তো কমবেশি সকলেই পুরীর রথ যাত্রার কথা জানি, কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের রথযাত্রার কথা ক’জন জানি? উত্তরবঙ্গের এই রথ যাত্রার বয়স কিন্তু কম করেও ১০০ বছর হতে চলল। ভক্ত এবং ভক্তিতে এখনো সমানভাবে পালিত হয়ে চলেছে এই রথযাত্রা।
একসময়ে কোচ রাজা নর নারায়ণ বৈষ্ণব ধর্মকে গ্রহণ করলে, তিনি রাজমন্দিরে মদনমোহন দেবকে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে রাজা রূপনারায়ণ রাজ্যের রাজধানী আঠারোকোঠা থেকে গুড়িয়াহাটিতে স্থানান্তরিত করলে, মন্দিরের স্থানও পরিবর্তিত হয়। পরবর্তীকালে রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৮৮৭ সালে তৈরি করেছিলেন বর্তমান কোচবিহার রাজবাড়ি। তখন থেকেই রাজবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে এই মদনমোহন মন্দির। মন্দিরে রৌপ্য নির্মিত চৌদোলায় বিরাজ করছেন মদনমোহন। যদিও মন্দিরে মদনমোহনের দুটি বিগ্রহ রয়েছে, বড় মদনমোহন এবং ছোট মদনমোহন। এই বড় মদনমোহনকে নিয়েই প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়াতেই রথযাত্রা উৎসব পালন করা হয়।
মূল মন্দিরের সম্মুখভাগে রয়েছে ‘বৈরাগী দীঘি’। কথিত আছে, একসময় বৈষ্ণব ধর্মের লোকেরা এখানে বসবাস করতেন। সেই থেকেই এই নাম। এই বৈরাগী দীঘির পাশ দিয়েই মদনমোহনদেবের রথযাত্রার শুরু হয়। এই রথযাত্রা শুরু হয় ১৯২০-২১ সাল নাগাদ। এখানে একসময় হাতির পিঠে চাপিয়ে জগন্নাথ, সুভদ্রা ,বলরাম এর রথযাত্রা বের হতো। তার পেছনে থাকতো রাজার সৈন্যবাহিনী। এখন দশরথও নেই, নেই তার অযোধ্যাও। কিন্তু এলাকাবাসীর মনে তাদের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির অভাব নেই। তাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তির রশিতেই রথ টেনে নিয়ে যান উৎসাহ ভরে। মন্দির থেকে যাত্রার পরবর্তী সাতদিন গুঞ্জবাড়ি এলাকায় এই রথ রাখা হয়। সেখানে মহা খাতির-যত্নে আপ্যায়ন করা হয় তিন ভাইবোনকে। সাত দিন পর, উল্টোরথে আবার মূল মন্দিরে। রথ দেখব অথচ কলা বেচবো না তা কি হয়! গুঞ্জবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় ছোট-বড় নানা ধরনের দোকান সাজান ব্যবসায়ীরা। তবে সে মেলা রাসমেলার মতো বড় নয়। কিন্তু তাতেই খুশি এলাকাবাসী।
বর্তমানে কোচবিহার পৌরসভা এবং দেবত্র ট্রাস্ট-ই রথযাত্রার আয়োজন করে থাকে। ২০২০ তে করোনা বিধি অনুযায়ী, ,ভক্তরা রথের দড়ি ছুঁতে না পারলেও রথের চাকা গড়িয়েছিল গুঞ্জবাড়ি পর্যন্ত। ব্যবস্থা করা হয়েছিল মোটরগাড়ির। ২০২১ এও সীমিত থাকল জনসমাগম। পূজিত ঈশ্বরকে দূর থেকে দেখেই মন ভরিয়ে নিতে হল ভক্তদের। তবে যে যাই বলুক। এই মহামারী থামলে, রথের দিন একবার মদনমোহন মন্দির থেকে ঘুরে আসতেই হয়, কী বলুন ?
Discussion about this post