অঞ্জন দত্তর একটি গানের লাইন, “বুড়িয়ে গেলেও আগলে রাখে হাত সংসার এখনও তাই।” যদিও এই গল্পে সেই হাত একেবারেই এক কিশোরের। তবে সেটি গল্প হলেও সত্যি, এই যা! ভাঙা সাইকেলের পিছনে বাঁধা রসগোল্লার ডেকচি। তাই নিয়েই গ্রাম ঘুরে মিষ্টি বিক্রি করছে সপ্তম শ্রেণীর এক কিশোর। লকডাউনের সময় থেকে এই ছবি দেখা যাচ্ছে বর্ধমানের নবস্থা ২ পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামে। মেমারির খাঁড়গ্রামে বাড়ি সুমনের। স্থানীয় জুনিয়র হাইস্কুলের ছাত্র সে। বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও রয়েছে বছর তিনেকের বোন। বাবা শরৎবাবু অ্যাম্বুল্যান্স চালাতেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ তাঁর ডায়াবিটিস ধরা পড়ে। শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। সুমনের মা নয়নমণি দেবী জানান, সেই সময়ে ছেলে তাঁদের বাড়িতে মিষ্টি তৈরির পরামর্শ দেয়। উপায় না দেখে ছেলের বুদ্ধিতেই ভরসা রাখেন তাঁরা।
ইটের গাঁথনির অ্যাসবেস্টসের চালের ঘরে সুমনদের ছোট্ট সংসার। সেখানেই সুমনের মা-বাবা তৈরি করেন মণ্ডা, সন্দেশ ও দই। ভাঙা সাইকেলে সকাল-বিকেল তা খাঁড়গ্রাম, করন্দা, ভৈটা, বেগুট, পালশিট গ্রামে বিক্রি করে সুমন। কোনও গ্রামে কোনও অনুষ্ঠান, মেলা বা খেলার আসর রয়েছে কি না, আগে থেকে খবর নিয়ে পৌঁছে যায় সেখানে। সুমন জানায়, দিনে অন্ততঃ ৫০০ টাকার বিক্রি হয়।
সুমনের কথায়, ‘‘রেশনে, মিড-ডে মিল থেকে চাল-আলু পাওয়া যায়। কিন্তু বাবার ওষুধ কেনা, পড়ার খরচ, সংসারের আরও নানা খরচের জন্যই সাইকেলে করে মিষ্টি বিক্রি করি।’’ শরৎবাবু বলেন, ‘‘ছেলের বুদ্ধি আছে। ইচ্ছে ছিল, ওকে শিক্ষিত করব। কিন্তু আমার এই অবস্থার জন্য সংসার চালাতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে!’’ খাঁড়গ্রাম জুনিয়র হাইস্কুল সূত্রে জানা যায়, গত বছর টাকার অভাবে সুমন ভর্তি হতে পারেনি। স্কুলের তরফেই করা হয় ভর্তির ব্যবস্থা।
চিত্র এবং তথ্য – শৌভিক দাস , সাগর সেন
Discussion about this post