প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে এক মায়ের দুই মেয়ে ছিল। দুই মেয়ে বড়ো হতে হতে ছিটকে যায় দু’জনের থেকে। ভিন্ন পরিবেশে বড়ো হতে হতে দু’জনের জীবন প্রবাহিত হয় দুই ভিন্ন দিকে। একজন হয়ে ওঠে সমস্ত শিম্পাঞ্জিদের আদি দিদিমা, আর একজন সমস্ত মানুষের আদি ঠাকুমা। তারপর পৃথিবীতে এলো মানুষের একের পর এক প্রজাতি। তারপর তারা একদিন হারিয়েও গেলে। একটা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে অথবা বিবর্তিত হয়ে আর একটা প্রজাতি এল এমনটি নয় কিন্তু। বরং একই সময়ে পৃথিবীর বুকে বাস করেছে মানুষের একাধিক প্রজাতি। সেটাই স্বাভাবিক, সেটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। যেমন লিও প্রজাতির বাঘ, সিংহ, চিতা… দিব্বি আছে একই পৃথিবীতে।
নিয়ান্ডারথাল মানুষ, প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বছর আগেই তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে মিলিত হতো। আগুনের ব্যবহার অবশ্যই তারও আগে। আর তাদের গুহাচিত্র তো আজও বিস্ময়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের মস্তিষ্কের আকার সেপিয়েন্সের চেয়ে বড়ো ছিল। তবু প্রায় তিরিশ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় তারা।
ইরেক্টাস মানুষ পৃথিবীতে কাটিয়ে গিয়েছে প্রায় ২০ লাখ বছর। হ্যাঁ, এত বেশি সময় মানুষের কোনও প্রজাতি টিকতে পারেনি। প্রায় অসম্ভব একটা সম্ভবনাকে সম্ভব করেও তারা প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে পৃথিবী থেকে মুছে যায়।
আর আমাদের, মানে সেপিয়েন্স মানুষের আবির্ভাব প্রায় ২ লাখ বছর আগে। মানে আমরা যখন গাছে ঝুলছি, তার প্রায় আড়াই লাখ বছর আগেই এই পৃথিবীর বুকে কিছু মানুষ মিলিত হচ্ছে সামাজিক অনুষ্ঠানে। মাত্র সত্তর হাজার বছর আগে শুরু হচ্ছে, সভ্য মানুষ হিসাবে আমাদের গর্বের ইতিহাস। যে সভ্যতার গর্বে জ্ঞানী মানুষ হিসাবে একদিন নিজেদের নামকরণ করেছে হোমো সেপিয়েন্স। কিন্তু আমাদের এই জ্ঞানই আমাদের সবচেয়ে বিপদ ডেকে এনেছে। এত দ্রুত আমরা ‘সভ্য’ হয়ে উঠেছি, উঠে এসেছি খাদ্য শৃঙ্খলার একদম ওপরে। প্রকৃতি কিন্তু তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। আমরা তাই আমাদের জ্ঞান দিয়ে প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে চলেছি নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থানে। এটা স্বাভাবিক নয়, এটা প্রকৃতির নিজস্ব সূত্রের পরিপন্থী। তাই সেপিয়েন্সের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।
কিন্তু সত্যিই কি সেপিয়েন্সের পরিণতি হবে অন্যান্য প্রজাতির মানুষের মতো? ঠিক জানি না, তবে এটা নিশ্চিত সেপিয়েন্স কখনও ইরেক্টাসের রেকর্ড ভাঙতে পারবে না। ইরেক্টাস তো অনেক দূরের কথা। সেপিয়েন্সের জীবনকাল যদি নিয়ান্ডারথালের মতোও হয় কিংবা অতোও নয়, আর মাত্র হাজার বছরও যদি আমরা টিকে থাকতে পারি, তাহলেই আমরা আর ঠিক মানুষ থাকব না। হয়ে উঠব অতিমানব। বিজ্ঞান আমাদের পৌঁছে দেবে এমন এক জায়গায়, যেখান থেকে আজকের মানুষের দিকে চাইলে হয়তো ‘গাছে ঝুলে থাকা’ মানুষের মতোই মনে হবে। অর্থাৎ, হোমো প্রজাতির একটা নতুন মানুষের আবির্ভাব আসন্ন বা সম্পূর্ণ মানুষ প্রজাতির বিলুপ্তি। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের রেষারেষিতে সেই বার্তাই ফুটে উঠছে।
কলমে জ্যোতির্ময় মুখোপাধ্যায়
লেখকের বক্তব্য একেবারেই নিজস্ব, এর সঙ্গে ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর সম্পাদকীয় নীতির কোনও সম্পর্ক নেই।
Discussion about this post