শরীরে প্যাঁচিয়ে রাখা মোটা দড়ি আর কোমরে বাঁশের ঝুড়ি। ঝুড়ির ভেতরে আছে বাটাল-হাঁসুয়া। দড়ির একপাশ বেয়ে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। এক নিমেষে গাছে উঠে পড়ছেন গাছি। গাছের ছাল-বাকল তুলে হাঁড়ি বেঁধে দিচ্ছেন। শীতকালে এটি গ্রামবাংলার একটি অতি পরিচিত দৃশ্য। শীতের সকালে এই খেজুরের রস বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। আর এই রস থেকেই তৈরী হয় বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য তরল খেজুর গুড় বা পাটালি।
বাংলাদেশের গুড়ের জগত জুড়ে সুখ্যাতি রয়েছে। ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্রের যশোহর খুলনার ইতিহাস বইতে পাওয়া যায়, ১৯০০-০১ সালে পূর্ববঙ্গে খেজুরের গুড় তৈরি হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার টন। সারা শীতকাল জুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রমরমিয়ে চলে গুড়ের বাজার। তবে বাংলাদেশের সব থেকে বড় খেজুরের গুড়ের বাজার চুয়াডাঙ্গা জেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের অন্তর্গত সরোজগঞ্জ গুড়ের বাজার।
দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন এই বাজারে খাঁটি গুড়ের স্বাদ নিতে। গুড় কিনতে আসা ক্রেতাদের মতে, এই অঞ্চলের খেজুরের গুড়ের মত স্বাদ অন্য কোথাও নেই। তাই বাড়ির গিন্নিরা পাত্র দিয়ে পাঠিয়ে দেন এখান থেকেই গুড় নিতে। এখানে খেজুরের গুড়ের মৌসুমে সপ্তাহে ২দিন বাজার বসে শুক্রবার এবং শনিবার। বাজারের প্রবীন এক ব্যাবসায়ীর মতে, প্রতিসপ্তাহে এই বাজার থেকে ৪০/৫০ ট্রাক খেজুরের গুড় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পূরণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার অভয়নগর গ্রামের গাছি সাহাদাত গাজীর মতে, প্রথম কাটের রস দিয়ে তৈরি করা হয় নলেন গুড়। নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ বেশি থাকে এই গুড়ে। নলেন গুড় দিয়েই তৈরি হয় সুস্বাদু সন্দেশ, প্যাড়া-সন্দেশ, ক্ষীর-পায়েস। প্রথম কাটের পর পালা কাটা হয়। পালা কাটার রসে তৈরি গুড়ে স্বাদ-ঘ্রাণ কম থাকে। বর্তমান সময়ে শীতকালে গুড়ের চাহিদা চিনিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। তাই গুড় তৈরি কোথাও কোথাও মজুরিভিত্তিক পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গায় খেজুরের গুড়ের অনলাইন বাণিজ্যও শুরু হয়েছে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – bahumatrik.com
Discussion about this post