কেকের মরশুম চলেই এসেছে দোরগোড়ায়। বিদেশী হলেও খাদ্যবস্তুটি এতটাই লোভনীয় যে, বাঙালি তাকে একরকম নিত্যদিনের সঙ্গী করে নিয়েছে। তবে ডিসেম্বরের কেক মানেই স্বাদে গন্ধে সে অনন্য। কেকের কারখানাগুলোতে ভীষনরকম তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে প্রবল উৎসাহী বাঙালি আবার নিজে হাতে কেক বানাতে আগ্রহী। কেকের সরঞ্জামাদি যেমন ক্রিম, কোকো পাউডার, ভ্যানিলা, ফুড কালার এসব কিনতে বাজার ছুটছে। মোটামুটি বড়দিনের উদযাপন নিয়ে পরিকশষল্পনা এখন শেষ পর্যায়ে। এইসময়েই চলুন একটু জেনে নেওয়া যাক, দেশ ভেদে বড়দিনের বিশেষত্বটা কেমন!
কোকি সা-জ্যাক (ফ্রান্স) – শামুকের সাথে প্রাকৃতিক বেশ কিছু ভেষজ উপাদান এবং পনির মিশিয়ে তৈরি করা হয় খাবারটি। খাবারের শুরুতে পরিবেশন করা হয়ে থাকে। তবে বড়দিনে এটি হয়ে পড়ে ফ্রান্সের মানুষের প্রধান পদ।
চিলেস এন নোগাদা (মেক্সিকো) – দারুন লোভনীয় এই খাবারটি। মেক্সিকোর বড়দিনের বিশেষ খাবার হিসেবেই পরিচিত। খাবারটির প্রধান উপাদান মাংস। এরপর মাংসের উপরে আগুন দিয়ে জ্বালানো পবলানো পিপার এবং সেটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়ে রাখা আখরোটের ক্রিম আর ডালিমের আস্তরণ। একবার সুযোগ হলে স্বাদ নিতেই পারেন।
সাত পদের মৎস্যভোজন (ইতালি) – বাঙালির চোদ্দ শাকের মতো, ইতালিতে বড়দিনে রান্না করা হয় মোট সাত রকমের মাছ। এই তালিকায় আছে- কালামারি, লিঙ্গুনি, চিংড়িসহ আরো বেশ কিছু মজাদার মাছ। মৃত্যুর তিনদিন পর যীশু দেখা দিয়েছিলেন। তাঁর ভক্তরা মাছভাজা রুটি খাওয়ান। তাই যিশুখ্রীস্টের সেই ফিরে আসার অপেক্ষায় মানুষ। এমনটাই প্রতিফলিত হয় এই খাবারে।
হালাকাস (ভেনিজুয়েলা) – ভুট্টা আর কলার পাতা দিয়ে মোড়া থাকে এই বিশেষ খাবারটি। এর ভেতরে থাকে কেইপার, কিশমিশ, মরিচ আর অনেক ধরনের মাংস। বাঙালির পাতুরির মতোই এভাবে মুড়িয়ে, বেঁধে রান্না করা হয় পদটি।
জাকাস্কি (রাশিয়া) – রাশিয়ার বড়দিনের খাবার এই জাকাস্কিতে অনেকগুলো লবণাক্ত মাছের স্বাদ পাওয়া যায়। পানীয়ের সাথে এই খাবারটি উপভোগ করেন রাশিয়ানরা।
সেইয়ে জে নাতাও (ব্রাজিল) – বড়দিনে টার্কি রান্নার যে প্রথা আছে, সেটাকেই অনুসরণ করে ব্রাজিল। বিশাল এক টার্কি রান্না করা হয় এখানে বড়দিনে। সেইয়ে জে নাতাও নামের বড়দিনের এই খাবারে আস্ত টার্কিকে শ্যাম্পেন। নানারকম মশলার মিশ্রণে রান্না করা হয়।
জাহাটর্টে (অস্ট্রিয়া) – অস্ট্রিয়াতে বড়দিনে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের মিষ্টান্ন। চকোলেট স্পঞ্জ আর এপ্রিকট ফল মিশিয়ে তারপর তৈরি করা হয় জাহাটর্টে নামক এই খাবারটি।
ডোরো ওয়াট অন ইঞ্জেরা (ইথিয়োপিয়া) – ভারতীয়দের মতো একটি থালায় অনেকগুলো খাবার একটু একটু করে সাজানো। বিশাল থালায় অনেকগুলো খাবারের সাথে পরিবেশন করা ডোরো ওয়াট অন ইঞ্জেরো খাবারটি ইথিয়োপিয়ার বড়দিনের বিশেষ খাবার।
চিকেন বোনস ক্যান্ডি (কানাডা) – কানাডায় ছেলে বুড়ো সবার প্রিয় বড়দিনের খাবার এই চিকেন বোনস ক্যান্ডি। দারুচিনির স্বাদে তৈরি এই ক্যান্ডিতে ঠিক মাঝখানে থাকে ক্রিমি মিল্ক চকোলেট।
বিতেল তোনে (আর্জেন্টিনা) – আর্জেন্টিনার বড়দিনের খাবার হলেও এর উৎপত্তি ইতালিতে। সেখান থেকেই খাবারটি ১৮০০ শতকের শেষদিকে কিংবা ১৯০০ শতকের প্রথমভাগে চলে আসে আর্জেন্টিনা। বাছুরের মাংস দিয়ে তৈরি হয় বিতেল তোনে। তবে সাথে থাকে কেইপার আর টুনা সস।
স্তলেন (জার্মানি) – আমাদের চেনা পরিচিত কেক এটি। বড়দিনের দিন জার্মানিতে রাম, মশলা আর চিনির আস্তরণ দিয়ে ঘরেই তৈরি করা হয়।
স্তেলেল্যাম্প্রেরিয়া জিয়ো ভুস (পর্তুগাল) – পর্তুগালের বড়দিনে এই কেকটি ডিম দিয়ে তৈরি হয়। এর আকৃতি অনেকটা আমাদের পরিচিত বান মাছের মত। ইচ্ছা করেই সামুদ্রিক মাছের মতো আকৃতিতে সাজিয়ে এই মিষ্টি খাবারটি খেতে ভালোবাসে পর্তুগীজরা।
এম্বিউলিতু চেস্টনাট (মাল্টা) – দেখতে এতটা লোভনীয় না হলেও, আম্বিউলিতু চেস্টনাট স্বাদে সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। অসাধারণ স্বর্গীয় স্বাদের এই খাবারটি তৈরি হয় মাল্টায়।
পোর্ককানালাদিকো (ফিনল্যান্ড) – ফিনল্যান্ডের পোর্ককানালাদিকো খেতে অনেকটাই গাজরের হালুয়ার মতো। আর তৈরি হয় বড়দিন উপলক্ষ্যেই!
চোরবা দে পেরিস্যুয়ারে (রোমানিয়া) – খুব সোজাসাপ্টা এই খাবারটিতে থাকে মিটবল আর টক ঘরানার একরকম স্যুপ। খুব বেশি ভারী খাবার নয়। তবে মন আর পেট দুটোই ভরিয়ে দেওয়ার মতো।
রিসেলিমান (ডেনমার্ক) – অ্যামন্ড আর চেরী দিয়ে তৈরি এই পায়েসটি। বড়দিন উপলক্ষ্যে তৈরি এই পায়েসের ভেতরে নানারকম উপহার রাখা থাকে। কখনো পুরো একটি বাদাম, আবার কখনো খেলনা। কেবল একটু খুঁজে নিতে হয়।
হাউয়িজেজট (আইসল্যান্ড) – সহজ করে বলতে গেলে, ভেড়ার মাংসকে ধোঁয়ায় সেঁকে তৈরি করা হয় হাউয়িজেজট।
মেন্স পাইস (ইংল্যান্ড) – বড়দিনের ঠিক আগে আগে তৈরি হওয়া এই বিশেষ খাবারটি। তৈরি করা হয় মাংস আর ফল দিয়ে। এর মাধ্যমে এটি মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, খুব দ্রুতই ছুটি আসছে!
বিবিঙ্গকা (ফিলিপাইন) – বিবিঙ্গকা একধরনের কেকের নাম। ফিলিপাইনের বড়দিনের এই বিশেষ কেকে ব্যবহার করা হয় চাল, নারকেল এবং পনীর।
পাভো ত্রুফাদো দে নাভিদাদ (স্পেন) – ট্রুফেলের মধ্যে টার্কির মজাদার মশলামাখা মাংস। স্পেনের বড়দিনের এই খাবারটি স্বাদে অতুলনীয়।
কুলকুলস (বাংলাদেশ) – ভারতের মতোই, বড়দিনে এখানে তৈরি হয় নারকেলের অসম্ভব মজাদার কুকি কুলকুলস।
চিকেন সুপা গোলেমোনোস (গ্রিস) – গ্রিসে বড়দিনের প্রথম খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয় চিকেন সুপা গোলেমোনোস। এতে ব্যবহার করা হয় মুরগীর মাংস, লেবু, ডিম এবং ভাত। খেতে চমৎকার বড়দিনের এই বিশেষ খাবারটি।
আকোহো সি ভোয়েনিয়া (মাদাগাস্কার) – ভারী তরল জাতীয় খাবারটিতে চিকেন-কোকোনাট স্ট্যু থাকে। তবে সেই সাথে থাকে আমাদের খুব পরিচিত ভাত। মন এবং শরীর, দুটোকেই চনমনে করে তোলার জন্য যথেষ্ট খাবারটি!
মশলাদার গরুর মাংস (আয়ারল্যান্ড) – আইরিশ জনগণ বছরের প্রায় সব উৎসব এবং ছুটিতেই তৈরি করে মশলাদার গরুর মাংস। এই পদটির মূল উপাদান গরুর মাংস হলেও সেই সাথে থাকে নানারকম ফল আর মশলার মিশ্রণ!
বিগোস (পোল্যান্ড) – পোল্যান্ডের বড়দিনের বিশেষ খাবার এটি। এতে পাওয়া যায় নানা ধরনের মাংস। তবে সেই সঙ্গে থাকে বাঁধাকপি আর মাশরুমও! আর স্বাদও অনন্য।
Discussion about this post