২৫ ডিসেম্বরের হাজার কেকের সমারোহে আরও একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। আর তা হল ঝুলি কাঁধে সান্তা বুড়োর বাড়ি বাড়ি আগমন। সান্টা ক্লজের গল্প আমরা কমবেশি সবাই প্রায় জানি। বছরের পর বছর বাচ্চারা আশায় থাকে ক্রিসমাসে সান্তার উপহারের। তবে যেসব বাচ্চারা সারা বছর ভালো কাজ করে তারাই সান্তা বুড়োর থেকে উপহার পায়। দুষ্টুরা পায় না। কিন্তু সেই দুষ্টু বাচ্চাদের শাস্তির ব্যবস্থা কে করবে? আর শাস্তি ছাড়া সংশোধন তো সম্ভবই নয়। এই সমস্যারও সমাধান রয়েছে। দুষ্ট শিশুদের শাস্তি দিতে আসে এই সান্তার খারাপ প্রতিরূপ। তার জামা কাপড় কুৎসিত এবং ভয়ঙ্কর, নাম ‘ক্র্যাম্পাস’। আর যে উৎসবে এই ক্র্যাম্পাসের আগমন ঘটে, সেটি হল ক্র্যাম্পাস নাইট। এটি হ্যালোইন এবং ক্রিস্টমাসের মিশ্রিত সংস্করণ। ক্রিসমাসের মতো আনন্দ না ছড়িয়ে ভয় ছড়ানো হয় এই উৎসবে।
ক্র্যাম্পাস একধরনের পৌরাণিক দৈত্য। দেখতে শয়তান এবং ছাগলের সম্মিলিত কোনো রূপ। গ্রিক পুরাণের কিছু প্রাণীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রয়েছে। বড় বড় বিষদাঁত, মাথায় বিশালাকারের শিং এবং কোমরে বাঁধা থাকে একটি ঘণ্টা। তার হাতে থাকে বার্চ বা ভুজ গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি চাবুক। আর গায়ে ভেড়ার বা ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি একটা মোটা চাদর জড়ানো থাকে। যেসব বাচ্চা দুষ্টুমি করে তাদের চাবুক মারে এই ক্র্যাম্পাস।
ক্র্যাম্পাস নাইটে পুরুষেরা ক্র্যাম্পাসের চেহারার মতো মুখোশ এবং সাজসজ্জা করে। মুখোশটি সাধারণত তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। এই মুখোশ বা চাদর ইউরোপে বেশ চড়া দামেই বিক্রি করা হয়। তবে নকল পশমের চাদর এবং মুখোশের বদলে সাধারণ রঙও ব্যবহার হয়। অবশ্য আধুনিক যুগে নারীরাও ক্র্যাম্পাসের মতো সাজে সজ্জিত হয়। তবে এক্ষেত্রে তাদের সাজসজ্জা এবং নামের কিছুটা পরিবর্তন থাকে। যেমন নারী ক্র্যাম্পাসদের বলা হয় ‘ফ্রাউ পার্চটা’। যাকে জার্মানবাসী উর্বরতা ও যুদ্ধের দেবী মনে করে। তাদেরকে ‘ক্রিসমাস উইচ’ও বলা হয়।
এই ভয়ঙ্কর উৎসবটি বন্ধ করা হয় বহুবার। ক্যাথলিকরাই নিষেধাঞ্জা দেন অপসংস্কৃতি হিসেবে। তবুও জার্মানি (মূলত ব্যাভারিয়া অঙ্গরাজ্য), অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, চেক প্রজাতন্ত্রে নতুন করে এর উদযাপন লক্ষ্য করা যায়।এর খ্যাতি বর্তমানে আমেরিকাতেও বেশ বেড়ে গিয়েছে। স্যান ফ্রান্সিস্কো এবং পোর্টল্যান্ডে এর জাঁকজমকভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ওহিও প্রদেশের ক্লিন্টোভিলে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ক্র্যাম্পাস প্যারেড হয়। অস্ট্রিয়ায় অনেকটাই বাণিজ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই উৎসবটি। চকলেট, মদ, ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি, মুখোশ ও শিং বিক্রির একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র। ক্র্যাম্পাস নাইট খ্রিস্টান ধর্ম প্রবর্তনের আগের এক ঐতিহ্যের অংশ। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিষয়গুলো বিলুপ্তির পথে। তবুও আমেরিকায় এই ক্র্যাম্পাস নাইট তার অনন্য ঐতিহ্যের জন্য খ্যাতি লাভ করছে।
Discussion about this post