দীপাবলি টোকা দিচ্ছে দরজায়। সেজে উঠছে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট এবং বাংলার কালী মণ্ডপগুলি। চলছে বাজারে কেনাকাটার ধুম। তাই আলোর পসরা নিয়ে হাজির কলকাতা ও শহরতলির বাজার হাট বিপুল উৎসাহে। বিকিকিনির ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা এজরা স্ট্রিটে আলোর অভিনবত্ব দেখার মতো। মাটির প্রদীপ আমাদের ঐতিহ্যর সাক্ষী থাকলেও জনসাধারণের ঝোঁক বৈদ্যুতিন আলোর দিকেই বেশি। সামনেই কালীপুজো ও দীপাবলি পেরিয়ে ছটপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজো। তাই প্রবল ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে আলোর বাজারে। টুনি লাইট, ঝালর বাতি তো আছেই। সঙ্গে দেদার বিক্রি হচ্ছে রিমোট নিয়ন্ত্রিত ‘টেপ লাইট’, ‘গ্লোয়িং মোটিফ’, ‘জল-বাতি’, বৈদ্যুতিন লণ্ঠন, ‘মেটাল ল্যাম্প’ সহ অসংখ্য নানা দৈর্ঘ্য ও বৈশিষ্ট্যের আলো।
মহানগরীর আলোর রাজধানী এজরা স্ট্রিটে ঘুরে ডেইলি নিউজ রিলের সমীক্ষায় উঠে এল বাজারে বাজিমাত করছে ফের চিনের আলোই। ‘মেড ইন চায়না’ যতই ভারত চায় না বলে ঘোষণা করুক, বাস্তবে চিন থেকে আমদানিজাত বৈদ্যুতিন পণ্যই কিন্তু বাজার ছেয়ে রেখেছে। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখতেই স্থানীয় ব্যবসায়ী মহঃ আব্বাস বলেন যে ভারতীয় ব্র্যান্ড চিনের তুলনায় আলোর ক্ষেত্রে টেকসই হলেও দামের দিক থেকে বেশ উঁচু। তাই ক্রেতারা রাজনীতি কূটনীতি ভুলে চিনা আলো কিনতে কিন্তু বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত নন। আলোর বাজারে ৯০ শতাংশ পণ্যই চিনা দ্রব্য। এমন দৃশ্য স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তোলে ভারতের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর উৎপাদশীলতার ওপরে। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র প্রতি জনসাধারণের রুচি তৈরী করতে চলেছে মরিয়া প্রয়াস। সংযুক্ত করা হয়েছে জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ। তবু বাজার উল্টো কথাই বলছে। চিন থেকে আমদানিজাত পণ্য, বিশেষ করে বৈদ্যুতিন সামগ্রী প্রভুত্ব বজায় রেখেছে একচেটিয়া। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এজরা স্ট্রিটের প্রবীণ ব্যবসায়ী শৈবাল চ্যাটার্জি আলোকপাত করেন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দুর ওপর।
চিনা প্রভুত্বের কারণ হিসেবে শৈবাল বাবু বলেন প্রথমত, আলোর চাহিদা ভারতে মূলত দীপাবলি কেন্দ্রিক হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আলোর উৎপাদনে ততটা আগ্রহী নন। চিন সেখানে শুধু ভারত নয়, বিশ্ববাজারের জন্য সারাটা বছর জুড়ে উৎপাদন করে। দ্বিতীয়ত, চিনের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর কাঁচামাল আর উৎপাদন শিল্প যেহেতু রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার সৌজন্যে একটা ‘ক্লাস্টারের’ মধ্যে অবস্থান করে, তাই চিনের উৎপাদনশীলতা বিশ্ব শ্রেষ্ঠ। তৃতীয় কারণ হিসেবে উঠে এলো চিনের কর্মসংস্কৃতি যা ভারত সহ অন্য দেশের তুলনায় অনেক বলিষ্ঠ।
আলোর বাজারে তাই চিনা দাপাদাপির শেষ নেই। চিনা সামগ্রীর অভিনবত্ব ও কম দাম ভারতের আম-আদমির খাস পছন্দ। ভারতীয় পণ্যও তার উৎকৃষ্ট মানের গ্যারান্টি নিয়ে বাজারে হাজির। তবে মূল্যের নিরিখে দীপাবলির বাজারে ক্রেতা টানার ক্ষেত্রে চিন ভারতের চেয়ে দশ ধাপ এগিয়েই। বলাই বাহুল্য, বৈদ্যুতিন আলো ও অন্যান্য পণ্যের বাজারে চিনা আধিপত্য রুখতে ভারতকে সাশ্রয়কর পণ্যের উৎপাদনের নীল নকশা অতি দ্রুত তৈরী করে ফেলতে হবে।
Discussion about this post