উৎসবের রেশ যেন এখনও বাঙালিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। চোখ বুজলেই যে অন্ধকারটা দেখি, তা দেখতে অভ্যস্ত নয় বাঙালি উৎসবের দিনে। চোখ চায় শুধু আলোর মিছিলে হাঁটতে। তাই তো, কালী পুজোর পর একটু স্বস্তি মিলেছে। আলো থেকে চোখের বিরাম মেলেনি। কালী পুজোর পরপরই প্রথমে কার্তিক পুজো তারপর দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো। কার্তিক পুজো যেমন বাঁশবেড়িয়াতে বেশ জনপ্রিয়। তেমনই জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত চন্দননগর।
এই ফরাসি শহরে জগদ্ধাত্রী পুজো বিখ্যাত। কয়েক শতক আগে ফরাসীরা এখানে বাণিজ্য শুরু করেছিলেন।চন্দননগরের বুকে চাউলপট্টিকে ঘিরে রয়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস। চন্দননগরে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল এই চাউলপট্টিতেই। শোনা যায়, সাড়ে তিনশো বছর আগে এই পুজোর সূচনা হয় ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর হাত ধরে। মূলত, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জগদ্ধাত্রী পুজোকে অনুকরণ করেই এই পুজো শুরু করেছিলেন তিনি। তারা দু-জন বন্ধু ছিলেন। তিনি তার ব্যবসায়িক বুদ্ধির জোড়ে চাউলপট্টির সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান হয়ে ওঠেন। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, চাউলপট্টি ছিল সেকালের বাংলার শস্য ভান্ডার।
চাউলপট্টির এই পুজো ‘আদি মায়ের’ পুজো নামে জনপ্রিয়। মাকে দেবী দুর্গা হিসেবে দেখা হয়। নতুন করে মণ্ডপ তৈরি হয় না এখানে। মায়ের মন্দির এখানে স্থায়ী মন্দির হিসেবেই তৈরি হয়েছে। আদি মায়ের গায়ের গয়না ভক্তদেরই দেওয়া। স্থানীয়দের মতে চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী বেশ জাগ্রত। ভক্তরা মানত রাখে মায়ের কাছে। তবে সাধারণত পুজোর জোগাড় করে মা মেয়েরা। এখানে একটু অন্যরকম। পুজো প্রচলনের সময় থেকেই পুরুষরা পুজোর কাজ করে চাউলপট্টিতে। আর সেই রেওয়াজ মেনেই আজও পুজোর ফল কাটা, দশমীর দিন মাকে বরণ করেন পুরুষরা।
তবে, অন্যান্য প্রতিমার সঙ্গে আদিমার প্রতিমার বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এখানে প্রতিমার বাঁদিকে হাতি থাকে। এছাড়াও দেবীর বাহন সিংহের রং এখানে সাদা। চাউলপট্টির মানুষের বিশ্বাস সেখানে পুজোর দিনগুলোতে অলৌকিক ঘটনা ঘটান দেবী। দেবী জগদ্ধাত্রীর চরণে ভোগ নিবেদন করা হয় পুজোর দিনগুলোতে। শোনা যায়, ষষ্ঠীর দিন ২০০ কিলো চালের পায়েস ভোগ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া অষ্টমীতে খিচুড়ি এবং নবমী নিশিতে পোলাও দেওয়া হয়। হৈমন্তিকা যেসব বেনারসী উপহার পান, তা গরীব কোনো মেয়ের বিয়েতে দেওয়া হয়। দশমীর দিন পাওয়া ১ কুইন্টাল ফল চন্দননগরে হাসপাতালে রোগীদের দেওয়া হয়।
Discussion about this post