দুর্গাপুজো থেকে দীপাবলি – এ বছরের মত সবটাই অতীত। হালকা ঠান্ডা আমেজে শীতের শুরুতেই থাকে আরেক জমাটি উৎসব। জগদ্ধাত্রী পুজো! আর তাই এবার মন কাড়ার পালা চন্দননগরের। আলোয় আলোয় চারিদিক সেজে ওঠার একটাই উপলক্ষ্য, জগদ্ধাত্রী পুজো। আর চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই চাউলপট্টির ‘আদি মা’।
এ পুজোর রঙিন ইতিহাস বলছে ‘আদি মা’-এর এই পুজোর বয়স প্রায় সাড়ে তিনশো বছর। এ পুজো নিয়ে গল্পের শেষ নেই। তবে একথা ঠিক যে এ পুজো শুরু হয়েছিলো কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুপ্রেরণায়। এই জগদ্ধার্থী পুজো শুরু করেন ফরাসি দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। এক সময়ে চন্দননগর ছিল বাংলার শস্য ভাণ্ডার। সে সময়ে এই এলাকার নাম ছিল ফরাসডাঙ্গা। পরবর্তীতে এই এলাকা হয়ে ওঠে চন্দননগরের চাউলপট্টি। জানা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান। তিনিই কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপাটিতে এই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন।
সেই থেকেই এটি চন্দননগরের আদি পুজো। বর্তমানে নগরবাসীর কাছে যা কিনা ‘আদি মা’য়ের পুজো। বারোয়ারি পুজো হলেও এ পুজোয় আজও সংকল্প দেওয়ান চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামেই হয়। ‘আদি মা’র প্রতিমায় রয়েছে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সনাতনরীতির এ প্রতিমায় সিংহের রঙ সাদা। আর হাতির অবস্থান বিপরীত মুখে। প্রতিবার নিজের রীতিতে সেজে ওঠেন ‘আদি মা’। তার উপস্থিতিই এক অপরূপ আলো হয়ে ধরা দেয় নগরবাসীর কাছে। এ পুজো কেবল ঐতিহ্য নয়, চন্দননগরের অন্যতম আবেগ।
পুরনো নিয়ম মেনেই চলে চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো। ষষ্ঠীর দিন মাকে শাড়ি ও প্রাচীন গয়না পরানো হয়। সপ্তমীতে সাতটি বিশাল বারকোষে হয় মায়ের নৈবেদ্যের আয়োজন। সেই সঙ্গে সপ্তমী থেকে নবমী প্রত্যেকদিন পাঁঠাবলি হয়। শুধু পাঁঠাবলিই নয় আখ, চালকুমড়োও বলি দেওয়া হয়। তবে আদি মায়ের পুজোতে বলি হলেও মায়ের ভোগ হয় সম্পূর্ণ নিরামিষ। নবমীর দিন মাকে নিবেদন করা হয় ১০৮ টি রক্তপদ্ম। এ আরেক অন্যরকম প্রথা। আর এই পুজোর মূল বৈশিষ্ট্যে হল এখানে পুজোর সমস্ত আচারই পালন করেন পুরুষরা। আলো, সাজ, নিয়ম, ঐতিহ্য সমস্ত মিলে মিশে জমজমাট হয়ে ওঠে চন্দননগরের ‘আদি মা’র পুজো।
Discussion about this post