চৈত্র সংক্রান্তির এক বিশেষ মাহাত্ম্য যে রয়েছে তা কম বেশি সকলেরই জানা। ওই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে আগে থাকতেই শুরু হয়ে যায় নানা ধরনের অনুষ্ঠান এবং পুজো। বেশিরভাগ জায়গাতেই মেলা দেখা যায় এই সংক্রান্তিকে ঘিরে। ঠিক তেমনই হাওড়ার ডোমজুরে চড়ক মেলা এবং পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে।
চৈত্র সংক্রান্তির ঠিক তিন দিন আগে দিয়ে হাওড়া জেলার ডোমজুরের নারনা গ্রামে চড়ক মেলা শুরু হয়ে যায়। সেই গ্রামে এক পঞ্চানন্দের মন্দির রয়েছে। সেই মন্দিরকে ঘিরেই জাকজমক মেলা বসে। শুধু মেলাই নয়! পঞ্চানন্দের পুজোও হয় সেখানে। শোনা যায়, পঞ্চানন্দের এই মন্দিরটির বয়স নাকি পাঁচশো বছরেরও বেশি। মন্দিরের মাঝে রয়েছে এই বিশাল অশ্বত্থ গাছ। মূল মন্দিরটি প্রায় চার শতক জমির ওপর রয়েছে। তার সাথে রয়েছে নাট মন্দির আর ভোগের মন্দির। পঞ্চানন মন্দিরটিতে ঢোকার ঠিক মুখেই রয়েছে রাধা গোবিন্দের একটি মন্দির।
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে এই মন্দির সৃষ্টির কাহিনী। মন্দিরের এক সেবাইত ধরণীধর ঘোষের মতে, তাদের এক পূর্বপুরুষ তুলারাম ঘোষ আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে এক স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তারপরই তিনি ওই অশ্বত্থ গাছের নীচে ঘট স্থাপন করে প্রথম পঞ্চানন্দের পুজো করেন।আগে মন্দিরটি কেবল একটি টিনের চাল দিয়ে ঢাকা ছিলো। এখন মন্দিরটিকে আরও উন্নত করা হয়েছে। কংক্রিটের থাম করে, মন্দিরের ছাদ পাকা করা হয়েছে। এবার আসি আসল কথায়। চৈত্র সংক্রান্তির দিন মন্দিরে নীল পুজোর আয়োজন করা হয়। সেই পুজো এবং মেলা দেখতে দলে দলে লোকেরা আসেন বিভিন্ন জেলা থেকে। মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার বহু মানুষের আগমন ঘটে। আসেন প্রচুর সন্ন্যাসীরাও। চৈত্র সংক্রান্তি ছাড়াও গাজনের মেলার সময় প্রচুর ভীড় হয় এই পঞ্চানন মন্দিরে।
চড়ক উৎসবে আপনি সব পাবেন। নাগরদোলা থেকে রকমারি খাবার, ঘর সাজানোর জিনিস কোনো কিছুই বাদ যাবে না। প্রচুর মানুষের সমাগম সামাল দেওয়ার জন্য সেখানে থাকে পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। প্রতি বছরই এই মেলা এবং উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। একবার সময় করে ঘুরেই আসুন না! হতাশ হবেন না।
তথ্য ও চিত্র ঋণ – অণুজিৎ দাস
Discussion about this post