শিবের গাজন কথাটা কে না শুনেছে! তবে গাজনের কথা বলতেই মনে পড়ে চড়কের কথা। গাজন উপলক্ষেই অনুষ্ঠিত হয় চড়কের মেলা। তবে এ শুধু মেলা নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে শিবের অনেক গল্প। আর শিব যেখানে পার্বতী তো সেখানে থাকবেই। আর গাজন হোক বা চড়ক হরগৌরীই হল তার মূল কেন্দ্র। শোনা যায়, নীলের সাথে চণ্ডিকার বিয়ে উপলক্ষে শুরু হয় গাজন। তো এই গাজন বেশ সাড়ম্বরেই পালিত হয় নদিয়ার পায়রাডাঙ্গায়। পায়রাডাঙ্গার ঘাঁটিগাছা অঞ্চলে পয়লা বৈশাখের দিন গোটা মাঠ জুড়ে বসে মেলা। আর মেলার মাঠে চলে চড়ক পুজো।
চড়কের ইতিহাস বলছে, বাণরাজা কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধকালীন রাজা শিব ঠাকুরকে স্মরণ করেন। সে সময়ে নিজের রক্ত ঝরিয়ে রাজা শিবকে তুষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যান। সেই থেকেই শৈব সম্প্রদায় এ উৎসব চালিয়ে যায়। আবার অন্যদিকে শোনা যায়, সে সময়ে ঋণে জড়িত কৃষকরা ঋণ শোধ করতে না পারলে তাদের বড়শিতে বেঁধে চড়কে ঘোরানো হতো। ১৮৯০ সাল পর্যন্ত এ ঘটনা চলে। ব্রিটিশ সরকার নাকচ করলেও গ্রাম এলাকায় এখনও এ উৎসব চলে।
উৎসবের আগের দিন চড়ক গাছকে স্নান করানো হয়। হলুদ, ঘি, চন্দন সহযোগে চড়ক গাছকে স্নান করিয়ে মাঠের নির্দিষ্ট জায়গায় লাগানো হয়। সংযম করে থাকা সন্ন্যাসীরা তারপর ওই গাছের সামনে ঘট প্রতিষ্ঠা করে। সেই ঘটেই চলে পুজো। এরপর ধীরে ধীরে শুরু হয় চড়কের চমক। আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, চোখের পাশে লোহার বাণ ফুটিয়ে রাখা কিংবা দাঁ-এর ওপর পা রেখে মাঠ প্রদর্শন সবই চড়কের খেলা হিসেবেই লোকজন দেখে। আর পায়রাডাঙ্গার এ চড়ক প্রায় ৩০ বছরের পুরনো। আটটা বড়শি পিঠে লাগিয়ে চড়ক ঘোরা এখানকার বিশেষত্ব। দেরি না করে চলে আসতেই পারেন এ চড়কের সাক্ষী হতে। পায়রাডাঙ্গাগামী ট্রেন ধরে, স্টেশন থেকে টোটো ধরে সোজা চড়ক প্রাঙ্গণ। এ উৎসবের আমেজ আপনাকে নিরাশ করবে না।
Discussion about this post