চন্ডু (আফিম) নামের এক জঘন্য নেশার উদ্ভাবন ঢাকায় করেন সোনাউল্লাহ নামে রোকনপুরের এক বাসিন্দা। ১৮৩০ সে তিনি কোলকাতা থেকে এক চিনা লোক নিয়ে এসে এই ব্যবসা শুরু করেন। অল্প দিনের ভেতর ঢাকার অভিজাত মুসলিম সমাজ এই নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তী বিশ বছর দোকানের সংখ্যা হয় ২০ টি। চন্ডুওয়ালারা মূলত মুসলিম ছিলেন। আর চন্ডুর পাইকারী চালানদার ছিলেন হিন্দু সাহারা। ক্রমান্বয়ে পূর্বভারতের অনেক জায়গাতে চন্ডুর চল শুরু হয়।
ঢাকায় জনবসতি গড়ে উঠার সাথে সাথে আফিমের প্রচলন শুরু হয়। পপি নামের উদ্ভিদের রস থেকে আফিম তৈরি হয়। আফিম দেখতে কটা বর্ণ। ইহা তিক্ত ও বিশেষ গন্ধযুক্ত। আঠেরো শতকের শেষ দিকে ঢাকার অলিতে গলিতে চন্ডুর দোকান দেখা যেত। অনেক সময় এটাকে আভিজাত্য হিসেবেও ধরা হতো। তবে শহরের ধনী ও দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্য ছিল। সে সময় আফিম এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে নবজাতকের মুখে আফিম দিয়ে বরণ করা হতো। ঢাকায় মুঘল অভিজাতদের ঘরে নিয়মিত আফিমের চালান যেত। সর্দি-কাশির ওষুধ হিসেবে মুসলিম শিশুদের আফিম খাওয়ানো হতো। সে সময় ঢাকায় শিশু মৃত্যুর হার ছিল সবচেয়ে বেশি। যদিও সে সময় সঠিক কারণ না জানলেও তা জন্য যে আফিম অনেকটাই দায়ী ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্ধ্যার পরেই ছেলে বুড়ো সবাই আফিমের নেশায় ঢুলতো।
ব্যবহারের আগে প্রথমে আফিমকে শুকনো পান দিয়ে সংমিশ্রিত করে প্রস্তুত করা হতো এবং ছোট ছোট টুকরো করে কাটা হতো। তারপর আলকাতরার মতো ঘনীভূত না হওয়া পর্যন্ত জ্বাল দেয়া হতো। এরপর তা শুকিয়ে গেলে ছোট ছোট বড়ি বানানো হতো। একটি বড়ি এক পয়সা দিয়ে কেনা যেত। ঢাকায় আফিম সেবন পরিচিত ছিল চন্ডু সেবন নামে। হিন্দু সম্প্রদায় গাঁজা ও মুসলিমরা চন্ডু এই দুটোকে ধূমপানের নেশা হিসেবে ব্যবহার করতেন। ব্রিটিশ আমলে তো বটেই পাকিস্থান আমলেও আফিম এর বেশ প্রচলন ছিল। ১৯৫৮ সালে ঢাকায় ১৪ টি আফিমের দোকান ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আফিমের ব্যবসা সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র –
১/ ঢাকার প্রাচীন পেশা ও তার বিবর্তন,
২/ উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের গরীবদের জীব







































Discussion about this post