কলকাতা তখনও সে অর্থে কলকাতা হয়ে ওঠেনি অর্থাৎ তখনও কলকাতাকে আধুনিক শহর বলা যায় না। ইতিহাস ঐতিহ্যেও যা প্রায় এক শতাব্দী প্রাচীন। কলকাতা জুড়ে তখন রাজ করছে দুই তাবড় ডাকাত। সে সময় একদিকে যেমন উত্তর কলকাতা যেমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রঘু ডাকাত, তেমনি অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতায় মনোহর ডাকাতের রমরমা। আর এই মনোহর ডাকাতের নামানুসারেই বর্তমানে কলকাতার মনোহরপুরের নামকরণ। এই মনোহর ডাকাতের সঙ্গে মিলেমিশে যেমন আজ ঐতিহ্য বহন করছে মনোহরপুর তেমনি আধুনিকতার সাথে ঐতিহ্যের মিশেল হয়ে আজও পূজিতা হন মনোহর ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত কালী মা।
প্রতিবছরের মতো এবছরও কালীপুজোর প্রাক্কালে সেজে উঠছে মনোহর ডাকাতের সাধের ছানা কালী। না এখন ডাকাত নেই,আর নেই ডাকাতের পরিবারও। কালের বিবর্তনে ডাকাতের বাড়িও আজ প্রায় ধূলিস্যাৎ। তবুও ঐতিহ্য বহন করে আজও করা হয় ছানা কালীর আরাধনা। অনেকে আবার এই ছানা কালীকে রঘু ডাকাতের কালী ভেবেও ভুল করেন। এই ছানা কালী নামটা শুনতে একটু অদ্ভুত মনে হলেও এই নামের পিছনের আসল উদ্দেশ্য হল এই কালী মাপে খুবই ছোট। কথিত আছে এই কালী নাকি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র কালী মূর্তি। তাই ভক্ত শিষ্যরা ভালোবেসে মাকে ডাকে ছানা কালী বলে।
‘ছানা খালি’ নামটা শুনে মোটেও ভাববেন না যে কালী ঠাকুর ছানা খেতে ভালোবাসেন কিংবা তিনি নিরামিষাশী। আসলে এখানে ছানা শব্দটি আক্ষরিক অর্থে ছোট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রমাণ হাত মাপের এই কালী পূজা ১২৯ বছরের প্রাচীন। এই ঠাকুর এতটাই ক্ষুদ্র যে মূর্তির সামনে না গেলে মায়ের দর্শন করা সম্ভব নয়। বরং বছরের বেশিরভাগ সময়ই ফুলমালার চাদরের নিচেই ঢাকা থাকে মায়ের মূর্তি। তাই মাতৃমূর্তির দর্শন করতে গেলে ভক্ত বৃন্দকে অবশ্যই পৌঁছে যেতে হবে মায়ের সান্নিধ্যে। তবেই না পাওয়া যাবে মায়ের দেখা।
Discussion about this post