বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে চৈত্র সেল এই পাব্বণ-পরিবারের জ্যাঠামশাইয়ের মতো প্রভাবশালী এবারেও। তাই চৈত্র মাস পড়তেই গোটা রাজ্য জুড়ে দোকানিদের মধ্যে সাজো সাজো রব। এর সাথে আবার দোসর ঈদও। চৈত্র-বৈশাখের চড়া পারদের ভ্রূকুটিকে আইসক্রিম দিয়ে কাবু করেই চলছে দেদার কেনাকাটা। লাইফলাইনের মতো সঙ্গত দিচ্ছে ঠাণ্ডা পানীয় আর ক্ষণিকের এসির হাওয়া। কোভিড কালে দু’বছর আর্থিক মন্দার পর এবারের সেল পুজোর জনপ্রিয়তা বার্ষিক দুর্গাপুজোর মতোই তুঙ্গে উঠেছে।
চৈত্রের কেনাকাটায় মানুষের ঢল দেখে মনে হয় এইসময় পকেট হাল্কা করার জন্যই বোধ হয় পকেট ভারী করার যাবতীয় খাটা খাটনি চলে বছরভর। গোটা চৈত্র মাস ধরে চলা এই সেল উৎসব আসলে বৈশাখেরই মুখবন্ধ। পয়লা দিনের জন্য বাঙালির নতুন জামা, মায়ের শাড়ি, নতুন ঘরসজ্জা, রান্নার সামগ্রী, নতুন বই। সব মিলিয়ে যে যেমন করে পারছে পুরনো বছরের ক্লান্তি ভুলে সাজিয়ে তুলছে আগামীকে। আর এই সমস্ত উদ্দীপনার ঢেউ আছড়ে পড়ছে হাতিবাগান, শ্যাম বাজারে, বড় বাজার, নিউ মার্কেটে, ধর্মতলার অলি গলি থেকে গড়িয়াহাট, দক্ষিণাপন সহ সারা পশ্চিমবঙ্গের রাস্তা ঘাটে। গমগম করছে শহর থেকে শহরতলির প্রতিটি স্টেশন রোড। এই সময় ফুটপাথ বিক্রেতাদের অভিনব হাঁক ডাকে কানে তালা লাগলেও এই ডাক জনস্রোতের মধ্যে এক জরুরী সংকেতের মতো কার্যকরী হয়, একথা ভুক্তভোগীরা স্বীকার না করে পার পাবে না।
হাড়ি-কড়া-খুন্তি-বটি, কাপ-ডিশ-চামচ, প্রসাধনী, ঠান্ডা পানীয়, খাবার, বাচ্চাদের খেলনা সবমিলিয়ে রাস্তা যেন একটা আস্ত মেলা প্রাঙ্গণ। দূর দূরান্ত থেকে কিছু উপার্জনের তাগিদে বহু মানুষ পৌঁছে গিয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা পণ্যের বাজারে। মাঝের দুবছর কোভিডের কোপে কাবু হয়েছে অল্প বিস্তর সবাই। সেই মন্দা কাটিয়ে উঠে অনেকটাই চাঙ্গা এখন শহর মফঃস্বলের বিকিকিনির বাজার।
অনলাইন শপিংয়ের দাপটে বার্ষিক সেলের উত্তেজনা কিছুটা ব্যহত তো হয়েছেই। তবু বাঙালির থেকে কেড়ে নেওয়া যায়নি এর পুরো আনন্দ। স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই তাই কেউ জামা কিনতে বের হচ্ছে ভিন রাজ্যবাসী সন্তানকে পাঠাবে বলে, কেউ সেলেই সেরে রাখছে বছর শেষের পুজোর বাজার। কেউ খুঁজছে নববর্ষের স্পেশাল শাড়ি, কেউ সারাবছরের ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে যাওয়া জামাটা বদলে নিচ্ছে এই সুযোগে। আর কিছু বেচাকেনার আশায় বুক বাঁধছে দোকানিরা। আশা করছে নববর্ষের আগের এই শেষ সপ্তাহে পয়লা বৈশাখ আর ঈদ মিলিয়ে ভালো জমবে আগামী কয়েকদিনের পসার।
Discussion about this post