যেখানেই ভক্তি সেখানেই জন্ম নেবে মনোরঞ্জনকারী গল্প গাঁথা। আর যেখানে আছে ইতিহাস, সেখানেই জড়িয়ে থাকবে মিথ। একথা কিন্তু অল্প বিস্তর হলেও অনেকেই প্রায় একমত। ঠিক এরকমই কিছু ইতিহাস, মিথ এবং গল্প গাঁথা নিয়েই গড়ে ওঠে এক-একটি স্থান। হালিশহরের চৈতন্যডোবা ঠিক এরকমই একটি স্থান। কিন্তু কীভাবে একটি স্থান বা পুকুর চৈতন্যদেবের সাথে জড়িয়ে গেল? আসুন আজ সেই গল্পই জেনে নেওয়া যাক।
এ বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী প্রচলিত। শ্রী ঈশ্বরপুরী ছিলেন চৈতন্যদেবের দীক্ষাগুরু। তারই জন্মস্থান হলো হালিশহর। ১৫১৩ সালে যখন শ্রীচৈতন্যদেব পুরীধাম থেকে বৃন্দাবনে যাওয়ার জন্য রওনা দিলেন। তখন সেই যুগে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে গঙ্গাবক্ষে যাবার পথেই পড়ত কুমারহট্ট। এই কুমারহট্টই বর্তমানে হালিশহর নামে পরিচিত। সম্রাট শেরশাহের আমলে এখানে অনেক বড়ো বড়ো হাভেলী তৈরি হয়। তাই এর আরেক নাম হাভেলী নগর। এই পর্যন্ত পুরো তথ্যই ঐতিহাসিক। তবে ‘মিথ’টা তাহলে কী? এখান থেকেই শুরু হচ্ছে এক প্রাচীন গল্প গাঁথা। কথিত আছে কুমারহট্টর নাম শুনেই মহাপ্রভু অস্থির হয়ে গেছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন তাঁর গুরুদেবের ভিটে দর্শন করবেন। তাঁকে প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করেই বাকি যাত্রা করবেন। কিন্তু তাঁর এই সাধ শেষপর্যন্ত অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তিনি কুমারহট্টতে পৌঁছানোর আগেই পুরীজি অর্থাৎ চৈতন্যদেবের গুরুজী এই ধরাধাম ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন।
তাই গুরুর কথা মনে করে তিনি বুকফাটা আর্তনাদ করে কান্নায় আছড়ে পড়েন। ভক্তিতে ভূমিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করেন ও নিজের জিভ ছোঁয়াান সেই পুণ্যভূমিতে। এবং সেই মাটি খুঁড়ে তুলে নিয়ে কিছুটা তার উত্তরীয়তে বেঁধে নেন। যা দিয়ে পরবর্তীকালে তিনি প্রতিদিন কপালে তিলক আঁকতেন ও তা জিভে ছোঁয়াতেন। ইতিমধ্যেই শ্রী চৈতন্যের আবির্ভাবের কথা শুনে বহু ভক্ত সেই জায়গায় জমা হতে থাকেন। শুধু একটিবার তার দর্শন লাভ করবেন বলে। কিন্তু তিনি ততদিনে গুরুজীর শোক ভোলার জন্য সেই স্থান ত্যাগ করে পুরী ধামে চলে যান। গুরুর প্রতি এই ভালোবাসা ও ভক্তির কথা চৈতন্য ভক্তদের প্রভাবিত করে ভীষণভাবে। ক্রমেই প্রচুর ভক্ত মহাপ্রভুকে অনুসরণ করে মাটি নিতে থাকেন সেই স্থান থেকে। ধীরে ধীরে সেখানে গর্ত হতে হতে ডোবার আকার নেয়। চৈতন্য দেবের হাতে প্রথম খোদিত হওয়ার জন্যই ওই জায়গার নাম হয় চৈতন্য ডোবা। তবে এই কাহিনীর সত্যতা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে বলেই একে মিথ বলা হচ্ছে।
বর্তমানে চৈতন্যডোবার মন্দির চত্বর এখন বিশালাকার ও সুসজ্জিত। ২০০৮ সালে হালিশহর পৌরসভার তরফ থেকে হেরিটেজ অর্থানুকুল্যে মন্দিরের নবসংস্কার হয় ও ২০১৪ সালে ভক্তদের রাত্রিবাস এর জন্য আশ্রমে দ্বিতীয় তলা নির্মিত হয়।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – Wikidata
Discussion about this post