গল্পটা শুরু হয়েছিল একটা অন্ধকার সময় থেকে। যখন একজন খেলোয়াড়ের নিজের সেরা ফর্মে থাকার কথা, তখন জীবনে আঘাত হানে ক্যান্সার। ২০১৩ সালে ধরা পড়ে টেস্টিকুলার ক্যান্সার। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা বলেছিলেন, ‘তুমি সুস্থ’। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ক্যান্সার আবার ফিরে আসে, সঙ্গে মানসিক অন্ধকার। চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি কিছুই বাদ ছিল না। একই সময় জীবনে নেমে আসে আরেকটি বড় আঘাত, বাবার মৃত্যু। শরীর আর মনকে অসার রাখতে মদের আশ্রয়। কি ভাবছেন, এর পরেই তো সব শেষ, তাই না? কিন্তু না, সব শেষ হয়ে যায়নি। এইতো ২০২৫এর ৭ মে তিনি শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জিতিয়ে দিলেন!
জীবনের অর্ধেক পেরিয়ে এসে, ৩৭ বছর বয়সে ইউরোপিয়ান ফুটবলে ফ্রান্সেস্কো অ্যাচেরবি করলেন তাঁর প্রথম গোল। হারালেন কঠিন প্রতিপক্ষ বার্সেলোনাকে। সেই গোল, যা তাঁর বর্তমান ইন্টার মিলানকে পৌঁছে দিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। কর্নার থেকে উঠে আসা বল, ফ্রান্সেস্কোর হেডে লেগে সোজা লেগে জড়িয়ে গেল জালে। ফেটে পড়ল ইন্টার মিলানের নিজস্ব মাঠ, লাফিয়ে উঠলেন দর্শকেরা। আর অ্যাচেরবি? তাঁর চোখে তখন জল। এই একটি মুহূর্ত যেন হয়ে উঠল তাঁর গোটা জীবনের লড়াইয়ের প্রতীক।
ফ্রানচেস্কো অ্যাচেরবি জন্মেছিলেন ইতালির মিলানে, ১৯৮৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। কেরিয়ারের শুরুটা ছিল খুব সাধারণ। আর পাঁচটা ফুটবলারের মতই। ছোট ক্লাব থেকে উঠে আসা। পেশাদার ফুটবলে নিজের জায়গা তৈরি করার চেষ্টায় এক তরুণ ডিফেন্ডার। কিন্তু তারপরেই এল অসুস্থতা, বাবার মৃত্যু, মাদকাসক্তি। সমস্তরকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। ফুটবলকে ভালোবেসে ফিরে আসেন মাঠে। শরীরকে প্রস্তুত করেন নতুন করে। ফেরেন পেশাদার ফুটবলে। প্রথমে সাসুয়োলোর হয়ে, পরে লাজিও এবং শেষ পর্যন্ত ইন্টার মিলানে। শুধু ডিফেন্ডার নয়, তিনি নিজের গল্প দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন সতীর্থদের। তাঁর মানসিক শক্তি এবং জীবনের প্রতি বিশ্বাস তাঁকে আলাদা করে তোলে বাকিদের থেকে।
Discussion about this post