গাজন উৎসব মূলত বাংলার একটি হিন্দু ধর্মীয় লোক উৎসব। গাজন শিব, মনসা বা ধর্মঠাকুরের পূজা কেন্দ্রিক। বাংলার নানা প্রান্তে গাজন নানা নামে পরিচিত। শৈবতীর্থ তারকেশ্বরের গাজনের কথা প্রায় সকলেই জানে, যেটি হয় প্রত্যেকবছর চৈত্র মাসে। প্রায় একমাস ধরে চলে গাজনের মেলা। কিন্তু এই তারকেশ্বরের কাছেই প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো যে বুড়ো রায়ের গাজন হয় তা অনেকেরই অজানা।
ধনিয়াখালি থানার অন্তর্গত বাশলা শ্রীরামপুর গ্রামের মূল উৎসব এই বুড়ো রায়ের গাজন। এই গাজনে প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার ঘট স্থাপন করা হয়। ১২ দিন ধরে চলে ধর্মমঙ্গলের পালাগান। ৪০০ বছর আগে কীভাবে এই গ্রামে বুড়ো রায়ের গাজন উৎসব শুরু হল সেটা একটু জেনে নেওয়া যাক। এই মন্দিরের একটি পাঁচালী আছে। সেই পাঁচালী থেকে জানা যায় যে ধনিয়াখালির দেওয়া গ্রামের এক বৃদ্ধা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ছিঁড়ে বিক্রি করতেন। সেই বৃদ্ধা ক্লান্ত হয়ে আকুলদহ নামের একটি দিঘীর সামনে বসে পড়েন। তারপর পদ্মফুলে ভর্তি সেই দিঘীতে স্নান করতে নামেন। স্নান করে এসে তিনি দেখেন চিঁড়ের ধামায় একটি কালো কষ্টিপাথর। সেই বৃদ্ধা দৈববাণী শুনতে পান। দেবতা নিজেকে বাবা বুড়ো রায় বলে পরিচয় দিয়ে বাশলা শ্রীরামপুর গ্রামের স্থাপন করতে বলেন। তারপর বৃদ্ধা শ্রীরামপুর গ্রামেই গেলেন। শ্রীরামপুর গ্রামের মালিবাড়িতে তিনি ধামা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখনই দেখা কষ্টিপাথর আর ওই স্থান থেকে সরানো যাচ্ছেনা। সেই থেকে শুরু হয় বুড়ো রায়ের গাজন।
সকালে বিশেষ পুজো এবং সন্ধ্যায় ধর্ম ঠাকুরের নাম সংকীর্তন হয়। এই গাজন উৎসবের প্রচুর মানুষ সন্ন্যাস গ্রহন করেন, ঝাঁপও হয় এখানে। পদ্মপুকুর থেকে কষ্টিপাথর ওঠার কারনে বুড়ো রায়ের পুজোর মূল উপকরণই হলো পদ্মফুল। বাশলা শ্রীরামপুর গ্রামে প্রতিবছরই ধুমধাম করে পালন হয় এই বাবা বুড়ো রায়ের গাজন।
চিত্র ঋণ – শুভজিৎ নস্কর
Discussion about this post