রথযাত্রার নাম শুনলেই কবি গুরুর লেখা সেই লাইনটির কথা মনে পড়ে যায় “রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধূমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।” সকলেই আমরা রথযাত্রার ঠিক এই দৃশ্য দেখেই বড় হয়েছি বলা চলে। হাজার হাজার ভক্তদের জমায়েত হওয়ার মাঝেই রথ এগিয়ে চলে। মনে প্রাণে থাকা ইচ্ছে বাসনা নিয়ে ভক্তেরা টান দেয় দড়িতে। পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার কথা আমরা জানি। এই যেমন মাহেশের রথ, গুপ্তিপাড়ার রথ কিংবা মহিষাদলের রথ। এই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রথের তালিকায় বর্ধমান রাজবাড়ীর রথযাত্রাও কিন্তু তালিকাভুক্ত। আর বাকি পাঁচটা রথযাত্রার থেকে বর্ধমান রাজবাড়ীর রথযাত্রা কিন্তু বেশ অন্যরকম। এই রথযাত্রায় একটি নয় বরং রাজা ও রাণীর দুটি রথ থাকে।
বর্ধমান রাজবাড়ি সংলগ্ন সোনাপট্টি এলাকায় রয়েছে লক্ষী নারায়ণ জিউ মন্দির। সেই মন্দিরেই রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো বছরেরও পুরনো রাজা রাণীর রথ। বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজা মহতাব চাঁদের আমলে ছিল পাঁচ তলার রথ। যদিও এখন তা ছোট হয়ে গিয়েছে। রথের সংখ্যা এখানে দুইটি। একটি রাজার রথ ও অন্যটি রাণীর রথ নামেই পরিচিত। জানা যায় এই রাজার রথটি ছিল আগে রূপোর যদিও তা এখন কাঠের। রাণীর রথটি পেতলের। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হল এই রথে কিন্তু জগন্নাথ, বলরাম কিংবা সুভদ্রা থাকেন না। বরং তার বদলে রাজার রথে থাকেন লক্ষ্মী নারায়ণ এবং রাণীর রথে অধিষ্ঠান করেন রাধা গোপাল। আর বাকি সব রথের থেকে এই বিষয়টিই রাজবাড়ীর রথযাত্রাকে আলাদা করে তোলে।
রাজবাড়ীর রথযাত্রা বরাবরই জাঁকজমকপূর্ণ। জানা যায় একটা সময় ছিল যখন এই রথযাত্রা রাজবাড়ীতে উৎসবের মতো পালিত হতো। আড়ম্বর খানিক মলিন হলেও উৎসবের আমেজ এখনো একই রয়েছে। এখন মহারাজকুমার প্রণয়চাঁদ মহতাব হলেন এই রথের সেবায়েত। স্হানীয়দের থেকেই জানা যায় তারা প্রতি বছরই এই রথযাত্রায় উপস্থিত থেকে ছেলেবেলার স্মৃতিগুলোকে উপভোগ করেন একসাথে।
Discussion about this post