হুগলির তারকেশ্বর ‘শৈবতীর্থ’হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত এক নাম। কিন্তু শিবঠাকুরের এই আপনদেশ থেকে সামান্য দূরত্বেই যে অবস্থান করেছেন বুদ্ধদেব সেকথা অনেকেরই অজানা। তারকেশ্বর থেকে কাঁড়ারিয়ার দিকে এগিয়ে দামোদর নদী পেরিয়েই পুরশুড়ার দেউলপাড়া গ্রাম। সেখানেই দামোদরের একদম পাড় ঘেঁষে রয়েছে একটি বুদ্ধ মন্দির। সেখানকার প্রাকৃতিক শোভা সত্যিই দেখবার মতো।সময়ের বিচারে যদিও এই মন্দির খুব বেশি প্রাচীন নয়। ১৯৮৫ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৪তম দলাই লামা এই মন্দিরের উদ্বোধন করেন। যা মন্দিরের ফলকে ‘ত্রিরত্ন সংঘ শান্তিবন বুদ্ধবিহার’ উদ্বোধন বলে উল্লেখ করা আছে।
দেউলপাড়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে বসবাস করা মানুষদের মধ্যে হিন্দুধর্মের মানুষের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু বৌদ্ধধর্মের কোনোরকম কোনো ছাপই এই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় নেই। তাহলে এরকম জায়গায় বুদ্ধমন্দির তৈরী হওয়ার কারন কী? সেইসময় এই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি তারকচন্দ্র বাইরি একবার সস্ত্রীক উত্তর ভারত ভ্রমনে যান। সেখানকার বৌদ্ধবিহার দেখে এবং বৌদ্ধ ধর্মের কথা শুনে প্রবলভাবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফিরে এসে এই বুদ্ধমন্দির বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৯ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেন এই মন্দির। যার ভেতরে রয়েছে সুন্দর বাগান, শান্ত উপাসনা কক্ষ, সাদা স্ফটিকের ন্যায় গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, মূর্তির চারপাশে চারটি পুষ্পস্তবক। দেওয়ালে আঁকা তথাগতর জীবনের নানা কাহিনীর তৈলচিত্র। প্রত্যেকবছর বুদ্ধ পূর্ণিমায় দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসে। ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক এটিকে পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতি দেন। তবে বর্তমানে এই বুদ্ধ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট।
এই ধর্মীয় হানাহানির সময়ে এই এলাকায় সমন্বয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে এই বুদ্ধ মন্দির। স্থানীয় দেবতা পঞ্চাননের পাশে বুদ্ধকে স্থান দিতে এলাকার মানুষ দ্বিধা করেনি। প্রতিষ্ঠাতা তারকচন্দ্র বাইরি প্রয়াত হলেও দেউলপাড়ার মানুষ সাধ্যমতো আগলে রেখেছেন এই মন্দির। মানুষের সমাগমে পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবেই হয়তো টিকে থাকবে এই বুদ্ধমন্দির। মন্দির, মসজিদ, বৌদ্ধবিহার সবকিছুকে ঘিরে তো মানুষই আছে, “মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে/ করে দেবমহিমা নির্ভর।”
Discussion about this post