কাঁটাতার পার করে এ দেশে আসতে হয়েছে ঠিকই! তবে মনের মধ্যে কোনো বেড়া নেই বারাসাতের বসু পরিবারের। এ পরিবারের গল্প নিয়ে চাইলে গোটা একটা সিনেমা তৈরি করা যায়। দেশভাগের পর সম্পত্তি বিনিময় করে এখানে ভিটে পেয়েছিল বসু পরিবার। কয়েক কাঠা জমিতে উপরি পাওনা এক মসজিদ। মুসলিম পরিবারের রূপান্তর হিন্দু ভিটেতে, এও কি সম্ভব? স্বজনদের আলোচনার শেষ ছিল না। তবে জমিতে থাকা এই মসজিদ নিয়ে মোটেই বিচলিত হননি বাড়ির কর্তা নীরদকৃষ্ণ বসু। উল্টে ভক্তির সাথে ভালোবাসা মিশিয়ে তিনি এ মসজিদকে সাজিয়ে তুলেছেন মনের মত করে। এখনও বোস বাড়ির মসজিদ এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের উপাসনাস্থল।
বারাসাত ডাকবাংলোর মোড় থেকে দশ মিনিট হেঁটে গেলেই নবপল্লী বয়েজ স্কুল। এই স্কুলের লাগোয়া একটি বাড়ি, যার এক প্রান্তে মসজিদ। এই হল বোস বাড়ি। রমজানে নামাজ পড়ে বসু পরিবার, নিয়মিত রোজা রাখেন এ বাড়ির প্রত্যেক সদস্য। মসজিদের গায়ে লেখা ‘প্রভুকে প্রণাম করুন।’ এ মসজিদ গোটা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। হিন্দু মুসলিমের ভাই ভাই রূপ এখানে একেবারে স্পষ্ট। একদিকে যেমন চলে নারায়ণ মন্দিরে পুজো। পাশাপাশি মসজিদে নামাজ পড়েন ইমাম সাহেব।
বর্তমানে এ বাড়ির মালিক পার্থসারথী বসু। তবে তার ঠাকুমা অর্থাৎ নীরদকৃষ্ণের স্ত্রী লীলাবতী তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলেন মসজিদে প্রদীপ জ্বালিয়ে। ঈদে জমিয়ে চলে উৎসব। দূর দূরান্ত থেকে আসেন রোজদাররা। ইমাম সাহেবের সঙ্গে চলে ফলাহার। মসজিদ প্রাঙ্গণ সেজে ওঠে আপন তালে। এ উৎসবে যোগ দেন আশেপাশের মুসলিম ভাইয়েরাও। বারাসাতের ডাক্তার উকিল থেকে শুরু করে রিক্সা চালক পর্যন্ত থাকেন নিমন্ত্রিতদের তালিকায়। সম্প্রীতির বার্তা বয়ে আনা এমন উৎসব চলুক বছরের পর বছর।
Discussion about this post