সম্প্রতি সুরকার বাদশার একটি গান প্রচারে আসার পরেই মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় মুখর নেটিজেনরা। ‘গেন্দা ফুল’ শীর্ষক এই গানটিতে দেখা যাচ্ছে শাড়িতে রীতিমতো বঙ্গতনয়া সেজে অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ। সঙ্গে রয়েছেন অভিনেত্রী পায়েল দেব। গানটির বাংলা অংশ ‘বড়লোকের বিটি লো’র উপস্থাপনার ভঙ্গিমা নিয়ে অনেক নেটিজেনই নিন্দায় মুখর। তবে একথা সত্যি, বহুদিনের পুরনো এক জনপ্রিয় গানের প্রসঙ্গ হঠাৎ এই ভিডিওটির মাধ্যমে আবার উঠে এসেছে। কিন্তু চিরতরের জন্য প্রদীপের নিচের জমাট বাঁধা অন্ধকারেই থেকে গেছেন গানটির স্রষ্টা, সত্তর দশকের এক জনপ্রিয় লোকগীতিকার রতন কাহার।
বীরভূমের সিউড়ির এক প্রত্যন্ত গ্রামের এই মানুষটি আজীবন থেকে গেলেন এক আত্মভোলা অচেনা-অজানা শিল্পী হিসেবেই। গানটির রচনা ১৯৭১-৭২ সালে। যদিও প্রচারের আলোকে আসে ৭৬ সালে যখন অশোকা কোম্পানির পক্ষ থেকে স্বপ্না চক্রবর্তীর কন্ঠে গানটি রেকর্ড করা হয়। গানটির সুরও করেছেন শিল্পী নিজেই। সে বছরই ‘গোল্ডেন ডিস্ক’ পুরস্কার জেতে গানটি। তবে গীতিকার কোনদিনই পাননি তার যোগ্য সম্মান। লোকশিল্পের সঙ্গে রতন কাহারের আত্মার সম্পর্ক। ঘর কোনদিন তাকে টেনে রাখতে পারেনি, লোকশিল্পের টানে চিরকাল ছিলেন ঘর বিমুখ। যাত্রাও করেছেন বহুবার। ঝুমুর, ভাদু,লেটো বিভিন্ন লোকসঙ্গীতে ছিল সমান দক্ষতা। নিজের ভাদু গানের দলও গড়েছিলেন। আকাশবাণীতে কাজ করেছিলেন বেশ কিছুদিন। তবুও যেমন পাননি সম্মান, তেমন জুটেছিল প্রবল অর্থাভাব।
অর্থের অভাবে নিজের কোনও সন্তানকেই বেশি দূর লেখাপড়া শেখাতে পারেননি, মেয়েকেও গান শিখিয়ে ওঠা হয়নি। যন্ত্রণা রয়েছে বুকের মাঝে কিন্তু আপনভোলা মানুষটির কারোর ওপর কোনো ক্ষোভ নেই। অশীতিপর এই মানুষটি বিড়ি বেঁধে সংসারের দায়ভার টেনেছেন বহুদিন অথচ তার গান বাংলার ঘরে ঘরে সমাদৃত হয়েছে। গ্রাম বাংলার মানুষদের মনের কথা তুলে ধরতে জানতেন রতন কাহার, তাই তো স্বামী পরিত্যাক্তা এক কুমারী মায়ের কান্নাকে তুলে দিলেন ওমন সুরে ‘বড়লোকের বিটি লো’। সমাজে নিপীড়িত এক মা আর তার সন্তানের মধুর কথোপকথন। সেই কুমারী মায়ের মতোই এক অপরিসীম ব্যথার আঁধারে থেকে গেলেন চিরকাল – লোকসংগীতশিল্পী রতন কাহার।
তথ্য ঋণ: ইনফিনিটি ওয়েভস স্টুডিও (কৌশিক মন্ডল)
Discussion about this post