ব্রহ্মবাবা, বড়বাবা কিংবা বড়হম্ বাবা স্থানীয় লোকের কাছে এই নামেই পূজিত হচ্ছে এই বিগ্রহ। সাঁতরাগাছি রেলস্টেশনের ৩ ও ৪ নং প্ল্যাটফর্ম ধরে হেঁটে গেলে মাঝ বরাবর অবস্থান করছে এই মন্দির। স্থানীয় বিশ্বাস ও স্মৃতিকথা মিলিয়ে বছরের পর বছর ধরে জাগ্রত বিগ্রহ রূপে তাঁর অবস্থান।
বিশ্বাসের শুরু টা একটা বটবৃক্ষ কে কেন্দ্র করে। শোনা যায় প্ল্যাটফর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্যে এই বৃক্ষকে সরিয়ে ফেলার প্রস্তুতি নেওয়া হলে এক রেল কর্মচারী স্বপ্নাদেশ পান মন্দির প্রতিস্থাপনার। তারপর কালক্রমে ছড়িয়ে যায় এই বটবৃক্ষের মহিমার কথা। শুধুমাত্র সাঁতরাগাছি কিংবা হাওড়া নয়, দূরদূরান্ত থেকে ভক্ত সমাবেশ ঘটে এই মন্দিরে। মন্দিরে বিগ্রহ বলতে একটি শিবলিঙ্গ, যাকে বট গাছটি ঢেকে রেখেছে। এই মন্দিরের উল্লেখ্য বিষয় এই যে, নির্দিষ্ট কোন মন্ত্র-আচার রীতি মেনে পুজো সম্পন্ন হয় না। নেই কোন পুরোহিতও। ভক্তরা নিজ সামর্থ্য ও নিজ উপায়ে দেবতাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। এ যেন ঠিক ঘরের ছেলেকে আদর যত্ন করার বিষয়। প্রতি সোমবার ও বিশেষ তিথিগুলিতে ভক্ত সমাবেশ ঘটে বেশি। পুরাণ অনুযায়ী মহাশক্তির প্রতীক শিবের পরম রূপই ব্রহ্মবাবা।
এই মন্দিরের আরও একটি বিষয় যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল ইচ্ছে পূরণকারী বট বৃক্ষ। কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু। ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ রাজপরিবারের স্পর্শে রোগ নিরাময়ের বিশ্বাস কীভাবে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের জন মননকে প্রভাবিত করেছিল সে বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। সেই থিওরির একটি উদাহরণ এই বটবৃক্ষের প্রতি মানুষের আস্থা। সাধারণ বিশ্বাসের ভর করে ভক্তরা এই বট গাছে লাল সুতোর সাথে লাল পাথর বেঁধে থাকেন মনস্কামনা পূরণের আশায়। স্থানীয়দের মুখে মুখে শোনা যায় এই মন্দিরের নানা মহিমার ঘটনা। দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় থেকে শুরু করে ভাগ্যের পরিবর্তন, এসব কিছুই মন্দির সম্পর্কে লোকমুখে প্রচারিত। বিশেষ তিথিগুলিতে ভক্ত সমাবেশ সামলাতে রেল পুলিশকে বহুবার বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ভক্তরা ভিড় জমান মন্দির প্রাঙ্গণে।
শিবজ্ঞানে জীব সেবার আদর্শের অনুকরণ করে ভক্তদের কেউ কেউ অন্ন কিংবা বস্ত্র বিতরণ করে মন্দিরের মহিমাকে আরও প্রসিদ্ধ করে তুলছেন। ২০১২ সালের পরবর্তী সময়ে মন্দিরের বহু সংস্কার সাধন ঘটে। ভক্ত সমাবেশ ও ভিড় এড়ানোর জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রেল কতৃপক্ষ। ঝুঁকি নিয়ে ভক্তদের রেললাইন পারাপার আটকাতে বসেছে কড়া নজরদারি। শিবরাত্রি, মহা সোমবার এই বিশেষ দিনগুলিতে মন্দির প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল থাকে চোখে পড়ার মতো। একটি নিছকই বিশ্বাস নাকি অলৌকিক দৃষ্টান্ত, এসব বিতর্কের ঊর্ধ্বে স্বমহিমায় অবস্থান করছে সাঁতরাগাছির বড়বাবার মন্দির।
Discussion about this post