বাঙালির মৎস্য আর মিষ্টান্ন প্রীতি কমবেশি সকলেরই জ্ঞাত। কোন মাছে ঝোল ভালো হয়, আবার কোন মাছে কালিয়া এ বিষয়ে জানতে তাদের রন্ধন বা মৎস্য কোনো বিষয়েই বিশারদ হতে হয় না। তেমনি তার মিষ্টির ভাঁড়ার নিতান্ত ফাঁকা নয়। কতরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুধুমাত্র রসনা মেটাতে। তবে মাছ আর মিষ্টি যদি একই খাবারে পাওয়া যায়? চেহারা মাছের অথচ স্বাদে মিষ্টান্ন! হ্যাঁ, এই ‘মাছ’ মিষ্টির সন্ধান পাওয়া যাবে বাংলাদেশের বগুড়ায়। বগুড়ার সুখ্যাতি, নেপথ্যে কি শুধু দই? উত্তর এককথায় ‘না’। পূর্ববঙ্গের বগুড়ার পোড়াদহের মেলা বিখ্যাত রকমারি মাছের জন্য। আসল মাছ থেকে মিষ্টি মাছ। গাবতলী উপজেলার ইছামতী নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এই মেলার ঐতিহ্য প্রায় চারশো বছরের।
ঐতিহ্যবাহী এই মেলার ও এক গল্প আছে, যেমনটা সবার থাকে। প্রায় চারশো বছর পূর্বে এই এলাকায় হাজির হন কোনো এক সন্ন্যাসী। এলাকার এক বিশাল বটগাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সেখানেই আশ্রম তৈরী করেন অন্যান্য হিন্দু সন্ন্যাসীরা। এখনো নিয়ম মেনে প্রতি বছর মাঘের শেষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সন্ন্যাসী পুজোর আয়োজন করে থাকেন। তবে এই মেলা ধর্মের গন্ডি পেরিয়েছে সেই কবেই! দু’দিন ব্যাপী এই মেলা এখন ধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে সার্বজনীন।
তবে মেলায় মাছকে ঘিরে এত উত্তেজনার বাড়বাড়ন্ত কিভাবে? যেখানে পাওয়া যায় ১০ থেকে ২২ কেজি ওজনের কাতলা! ১৬ কেজি ওজনের চিতল! এক একটা মাছ বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায়! মেলায় এই বিশাল মাছের বাজার কিসের জন্য? দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকার রীতি অনুযায়ী জামাইরা শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় হাতে করে নিয়ে যায় বড় বড় মাছ। এক একটা মাছ আকারে এতটাই বড় যে চোখে না দেখলে অবিশ্বাস্য লাগবে!
তবে কি শুধুই জলজ্যান্ত মাছ! পেল্লায় বড় বড় এক একটা মাছ আকৃতির মিষ্টি সাঁতার কাটছে রসের মধ্যে। বড়ো ছোটো বিভিন্ন আকারের মাছ মিষ্টি নিয়েই হাজির হয় দোকানিরা। দশ কিলো ওজনের মিষ্টিও বিদ্যমান সেখানে। বৌ-জামাই-শ্বশুর নির্বিশেষে পোড়াদহ মেলায় বেচাকেনা করে এলাকার লোকজন। এসব শুনে মনে বিস্ময় জন্মানোই স্বাভাবিক। বগুড়ার দই চেখে দেখলেই শুধু হবে না, পূর্ব বঙ্গের এই মাছ-মিষ্টির আমেজ চাক্ষুষ করতে গেলে বগুড়া যেতেই হয়! আর বাংলা মানেই তো মাছ, মিষ্টি অ্যান্ড মোর..
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – মহঃ সাইফুল ইসলাম (বাংলাদেশ প্রতিনিধি)
Discussion about this post