শিশিরে ভেজা ঘাস,শিউলি ফুলের গন্ধ বার্তা বয়ে আনে দশভুজার আগমনের। বলা হয়, মায়ের হাতেই যেমন বিনাস ঘটেছিল মহিষাসুরের, তেমনি মায়ের আসার সাথে সমাজের সব অশুভ শক্তিরও বিনাস ঘটে। আর তাই মহিষাসুরমর্দিনী মায়ের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে দিন এক করে দেন গুটিনাগুড়ি গ্রামের অস্ত্র শিল্পীরা। বাংলা সহ প্রবাসের অপরূপ মাতৃমূর্তি সেজে ওঠে এখানের তৈরী অস্ত্রেই। গুটিনাগুড়ি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গড়ে উঠেছে অস্ত্র কারখানা, যে অস্ত্র কারখানায় শুধুমাত্র দেবদেবীদের অস্ত্র তৈরি হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়গপুর ডিভিশনে বীরশিবপুর স্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বোয়ালিয়া বাস স্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েক মিনিটের পথ গেলেই গুটিনাগুড়ি গ্রাম। গ্রামের পুরুষ মহিলাদের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়ারাও হাত লাগান মায়ের জন্য অস্ত্র তৈরিতে। ভোর থেকে রাত অবধি গ্রামে ঢুকলেই অধিকাংশ বাড়ি থেকে টিনের সিটের উপর হাতুড়ি ঠোকার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়।
তৈরী হওয়ার অস্ত্র গুটিনাগুড়ি গ্রাম থেকে কলকাতার কুমারটুলিতে দিয়ে আসা হয়। এরপর সেখান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তাদের কর্ম দক্ষতা আর গুননৈপুণ্যের জোরেই অসাধারণ মাদুর্গার অস্ত্রগুলি তৈরি হয়ে থাকে। গ্রামের অস্ত্র শিল্পীদের মতে, প্রথমে কলকাতা থেকে টিনের সিট কিনে নিয়ে আসা হয়। তারপর সেগুলো লোহা বা কাঠের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সোজা করে সাইজ মতো কেটে নেওয়া হয়। তারপর একে একে দেবীর অস্ত্র তৈরি করা হয়। অস্ত্র তৈরীর পরে রং ও তুলির সাহায্যে অস্ত্রকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। গ্রামের একজন প্রবীণ অস্ত্র শিল্পী জানান, “মূলত এক থেকে ১২ নম্বর সাইজের অস্ত্র ১৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি স্পেশাল সাইজের অস্ত্র ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সারা বছর অস্ত্র তৈরির কাজ করা হলেও, পুজোর এই সময়টা রাত জেগে কাজ করতে হয়। না হলে অস্ত্রের জোগান দেওয়া কার্যত মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তবে কাঁচামালের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের অঙ্ক সেভাবে বাড়েনি।”
গত দু’বছর করোনার কারণে সেভাবে বাজার না থাকলেও, এই বছর ব্যাপক হারে অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে দুর্গাপুজোকে ইউনেসকো হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ায় পুজোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অস্ত্রের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসি ফুটেছে গুটিনাগুড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে। একজন স্থানীয় বাসিন্দার মতে, “মা তো এভাবেই সবার দুঃখ কষ্ট দূর করে, সবার মুখে হাসি ফোটান।”
Discussion about this post