কোনো দেশ তার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কতটা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, বারেবারে তার নিদর্শন স্থাপন করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। আর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ভাষাগত মিল তো বটেই, দুই বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিলও যথেষ্ট অবদান রাখে এই সেতুবন্ধনে। বহুযুগ ধরেই দুই দেশ শিল্প, খাদ্য, নদী, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। তবে শুধু অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্কই নয়, দুই বাংলার মধ্যে যেন গড়ে উঠেছে ‘রক্তের সম্পর্ক’ও।
ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসার জন্য আট বছর আগে মে মাসে কলকাতায় আসেন বাংলাদেশ-নিবাসী মিজান। পরিকল্পনামাফিক বাবাকে তিনি ভর্তিও করেন নিউটাউনের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে। চিকিৎসা শুরু হলেও, বাধ সাধে এক জীবনদায়ী উপাদানের অভাব। রক্ত! রোগীর প্রয়োজনে হাসপাতাল থেকে তাৎক্ষণিক রক্তের ব্যবস্থা করা হলেও, নিয়ম অনুযায়ী রোগীর পরিবারকে জোগাড় করতে হত রক্তদাতা। কিন্তু বিদেশে রোগীর পরিজন বলতে তো কেবলই স্ত্রী ও পুত্র! সঙ্গে সঙ্গে রক্তদাতার খোঁজ শুরু করেন তিনি। কোনো খোঁজ না পেয়ে প্রাথমিকভাবে হতাশ হয়ে পড়লেও, অবশেষে কিছুদিন পরে তিনি যোগাযোগ করেন পূর্বপরিচিত কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া-নিবাসী কৌস্তভ রক্তদান করে ফেলেছিলেন মাসখানেক আগেই। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। বন্ধু ও পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করে রক্তদাতা খুঁজতে থাকেন কৌস্তভবাবু। কিন্তু কেউ শারীরিকভাবে অক্ষম, কারও বা যাতায়াতের সমস্যা তো কেউ আবার রক্তদান করেছেন তাঁরই সাথে কিছুদিন আগেই! এভাবেই বিফল হতে হতে অবশেষে একদিন পেয়ে গেলেন আত্মীয় তথা সহকর্মী, দমদম-নিবাসী দেবাশিসবাবুকে।
নির্ধারিত দিনে বেরিয়ে পড়লেন তাঁরা নিউটাউনের উদ্যেশ্যে। কৌস্তভবাবুর কথায়, “দেবাশিস যখন রক্ত দিতে ঢুকল, তখন আমি মিজানের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। কথা বলে বুঝতে পারলাম, ওরা খুবই শিক্ষিত পরিবার। মিজানের গলায় আবেগের বাষ্প, বললো, দাদা, আমাদের এখানে কেউ নাই। আমি বললাম, আমরা তো আছি। যখনই প্রয়োজন হবে ফোন করবে আমাকে।” পরবর্তীকালে চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা আরও এক বাংলাদেশী ক্যান্সার রোগীর রক্তের ব্যবস্থা করেন তিনি। প্রসঙ্গত, সেই রোগীর পরিবারের থেকেই তিনি জানতে পারেন ‘ব্লাডমেট্স’ নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিষয়ে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের না চিনলেও, রক্তের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পাশাপাশি ঐ সংস্থার তরুণ-তরুণীদের নিঃস্বার্থ ভূমিকা ও আন্তরিক ব্যবহারের প্রশংসা শুনে বাঙালি ও ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করেছেন তিনিও। যুবসমাজের এই মনোভাবই যে দুই দেশের নজিরবিহীন দৃঢ় সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে আরও কয়েক ধাপ, সে কথা তো বলাই বাহুল্য!
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – কৌস্তভ ব্যানার্জী
Discussion about this post