মহামারীর সঙ্গে লড়তে লড়তে বিধ্বস্ত দেশ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবার শীঘ্রই আছড়ে পড়তে চলেছে তৃতীয় ঢেউও। তবে এই আবহে কিছু ক্ষেত্রে করোনা-রোগীদের চেয়েও যেন বেশি সমস্যায় পড়ছেন অন্যান্য রোগীরা। চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না রক্ত। সংক্রমণের আতঙ্ক, সরকারী বিধি নিষেধে যাতায়াতের অসুবিধা ইত্যাদি কারণে ইচ্ছুক রক্তদাতারা ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত দিতে পারছেন না। তেমনই প্রোটোকল মেনে ভিড় এড়িয়ে রক্তদান শিবির আয়োজন করার ক্ষেত্রেও দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন অসুবিধা। টিকাকরণের পর রক্ত দিতে না পারার সময়সীমা বর্তমানে ২৮ দিন থেকে কমিয়ে ১৪ দিন করা হলেও, সংক্রমণমুক্ত হওয়ার পর রক্তদান করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে তিন মাস! ফলে ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে দেখা দিয়েছে রক্তের চরম সঙ্কট। স্বেচ্ছায় রক্তদান ছাড়া এই সঙ্কট থেকে মুক্তির নেই কোনো বিকল্প পথও! এই অবস্থায় ত্রাতার ভূমিকায় নামলেন সেই প্রথম সারির যোদ্ধা চিকিৎসকরাই।
আগামী ১৮ জুলাই, রবিবার সকাল ১০:৩০ থেকে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের শ্রীরামপুর শাখা তাদের আইএমএ ভবনে আয়োজিত হতে চলেছে একটি রক্তদান শিবির। ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর সঙ্গে কথোপকথনে শিবিরের মূল উদ্যোক্তা আইএমএ’র শ্রীরামপুর শাখার সভাপতি ড. পি কে. দাস জানালেন কিছু কথা। তাঁর বক্তব্য, বিশ্বের ৩৯টি দেশ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে সামগ্রিক রক্তের চাহিদা মেটাতে পারলেও, এক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আমাদের দেশ। ফলে রক্তের উপর নির্ভরশীল থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, জরুরিভিত্তিক সার্জারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন রোগীরা। সেই ক্ষতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই এই কর্মসূচীতে আইএমএ.’র সঙ্গে সামিল হয়েছে স্বাস্থ্য ভাবনা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, সুরাঙ্গন-অভিজ্ঞান, শ্রীরামপুর শিশু উৎসব সমিতি ও সেন্ট্রাল ডান্স একাডেমি অব শ্রীরামপুর। তাছাড়া চিকিৎসকদের সংগঠন হওয়ায় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে একটা বাড়তি দায়িত্ববোধও। তাই প্রতি বছরই চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে তাঁরা এই সময়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে থাকেন।
স্থানীয় শিবিরগুলিতে অন্যান্য বারের তুলনায় গতবারে রক্তদাতার সংখ্যা ছিল বেশ কম। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ আয়োজকরা। যদি একজন মানুষও ভয়কে জয় করে এগিয়ে এসে অন্যদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তাতেই তাঁরা সার্থক মনে করবেন এই কর্মসূচী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সংগঠন জনসাধারণকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দিয়ে আসছে অতি সুলভে অনাক্রম্যতা টিকাকরণ সহ স্বাস্থ্যমূলক বিভিন্ন পরিষেবাও। রক্ত দিতে একটুখানি সূঁচের ব্যথা লাগলেও, সহ-নাগরিকদের জীবন বাঁচানোর ভালো লাগাটা কিন্তু অনেকখানি! কাজেই আর দেরী নয়, দেখা হচ্ছে ১৮ জুলাই রবিবার। শ্রীরামপুর আইএমএ ভবনে সকাল ঠিক সাড়ে দশটায়, আসছেন তো?
Discussion about this post