সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে কে না চায়? এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এই চাহিদাই যখন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, তখনই জন্ম নেয় অপরাধপ্রবণতা। পুরোনো দিনের ঠগীদের কথা আমরা দাদু-ঠাকুমাদের মুখে বা বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে হামেশাই পড়ে থাকি। পথচলতি মানুষকে ঘায়েল করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে চম্পট দিত তারা। তবে আজ যে দলটির কথা আপনাদের জানাবো, তারা ছিল অনেক বেশী নৃশংস। শুধু লুঠপাটেই থেমে থাকতো না তারা, করতো খুন, এমনকি ধর্ষণও। এহেন বিপজ্জনক দলকে ধরা স্বাভাবিকভাবেই ছিল না খুব সহজ। জানলে অবাক হবেন, অবশেষে কীভাবে নিজেদের ঘৃণ্য অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিল তারা!
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ‘কর্ণাটকের ত্রাস’ হিসেবে পরিচিত ছিল দান্দুপালায়া। এই অল্প সময়ের মধ্যেই কোলার, ব্যাঙ্গালোর, মান্ডিয়া, কেজিএফ, মাইসোর থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর হসুর, দেনকানিকোট, এমনকি অন্ধ্রপ্রদেশের চিতোর, অনন্তপুরা পর্যন্ত নিজেদের নৃশংসতার পরিচয় দেয় তারা। এই দলের নেতা ছিল বছর পঁচিশের যুবক ভেঙ্কট স্বামী। শোনা যায়, প্রথমদিকে সদস্য সংখ্যা মাত্র ২০-৩০ জন হলেও, শেষদিকে তা বেড়ে হয়েছিল প্রায় ৮০। পুলিশের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল এই দলকে পাকড়াও করতে।
কান টানলে মাথা আসে – এই প্রবাদে ভরসা রেখেই পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে গঙ্গামাকে। ‘আচার-বুড়ি’ নামে পরিচিত গঙ্গামা নাকি আচার তৈরীর জন্যই হামানদিস্তায় কুলের দানা গুঁড়ো করেন রোজ, এমনটাই জানতেন এলাকাবাসী। কিন্তু তদন্তে যা জানা যায়, তা শুনে চোখ কপালে উঠে যায় তাঁদের। কুলের দানা নয়, তিনি আসলে গুঁড়ো করতেন লুঠ করা সোনার গয়না! সেই গুঁড়ো সোনা তারপর কোলার, মাইসোর, বেঙ্গারপেট সহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ত। এরপরই একে একে ধরা পড়ে দলের সর্দার সহ বাকিরাও। কিন্তু গ্রেফতার করলেই তো হল না! স্বীকারোক্তি? পুলিশের নির্মম অত্যাচারেও তারা ছিল অবিচল। অবশেষে কীভাবে হল সেই অসাধ্য সাধন?
হালকা হলদেটে ঘি, লম্বা লম্বা সুগন্ধি চাল, মোলায়েম কয়েক টুকরো মাংস এবং সুগন্ধী মশলার অপূর্ব মিশ্রণ – বিরিয়ানি! হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি! দীর্ঘ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারও যা করতে পারেনি, সামান্য বিরিয়ানি মুখে দিতেই তা সম্ভব হয়েছিল। অনায়াসেই নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিল তারা। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বোঝা যায়, একটু ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্যই ‘Dog eat dog’ প্রবৃত্তির শিকার হয়েছিল প্রত্যেকে। বিচারে সকলেরই ফাঁসির সাজা হয়। দুঃখের বিষয়, আজও অনেক অপরাধী এই প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। সমাজ এগিয়েছে অনেক, কিন্তু এই সমস্যার সমাধান আজও অধরা।
Discussion about this post