‘বার্ডম্যান অফ চেন্নাই’ , জোসেফ সেকরকে সকলে এই নামেই চেনে। তিনি ‘ঝিনেদার জমিদার কালাচাঁদ রায়’ ও নন, অত্যন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত একজন মানুষ। পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রী আবার সাথে ক্যামেরাও সারাই করেন। চেন্নাইয়ের মতো ব্যস্ত শহরে থেকেও তিনি রোজ ৩০০০ টি টিয়া পাখিকে খেতে দেন, নিজের রোজগারের প্রায় অর্ধেক টাকা দিয়ে। বাড়তি পাওনা বলতে, এক পরিতৃপ্তিপূর্ণ নির্ভেজাল আনন্দ। চেন্নাইয়ের বাসিন্দা জোসেফ ১৭ বছর ধরে পালন করে আসছেন তাঁর এই ভূমিকা। এই ১৭ বছরে জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই আসলেও কোনোদিন তাঁর এই কর্তব্য পালনে বিচ্যুতি ঘটেনি।
তখন ২০০৪ সাল। দক্ষিণ ভারতের বুকে সুনামির তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় চেন্নাই। এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়নি পশুপাখি থেকে সাধারণ মানুষ কেউই। সকলেই আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত। এই বিপর্যয় ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে শহর, এমন সময়ে একদিন জোসেফ তাঁর বাড়ির ছাদে চারটি টিয়াকে বসে থাকতে দেখেন। কেমন গুটিসুটি হয়ে বসে থাকতে দেখে তাদের উপর বড়ো মায়া জন্মায় তাঁর। তিনি এক মুঠো চাল দিয়ে আসেন তাদের খাওয়ানোর জন্য। সেই থেকেই শুরু। সেই চারটি টিয়াপাখি থেকে আজ ৩০০০ টিয়াপাখি। তাদের ভিড়ে সামিল হয়েছে পায়রা, ঘুঘু সবাই। কিন্তু জোসেফ পেট ভরিয়ে চলেছেন সকলেরই।
পাখিদের খাওয়ার জন্য তাঁর বাড়ির ছাদে রয়েছে বিশেষ কাঠের পাটাতনের ব্যবস্থা। যাতে এত গুলো পাখি একসাথে বসে খেতে পারে। প্রতিদিন এতে কমপক্ষে ৪০ কেজি চাল-ডাল প্রয়োজন হয়। এই চাল-ডাল কিনতে খরচা হয়ে যায় উপার্জনের ৪০% অর্থ। তবুও থেমে থাকেনা কোনো কিছুই। রোজ ভোর ৪টায় শুরু হয়ে যায় পাখিদের পাত পেড়ে খাওয়ানোর আয়োজন পর্ব। পাখিদের প্রাতঃরাশ শেষ হলে ছাদ থেকে কাঠের পাটাতনগুলো তুলে রেখে চলে যান দোকানে। আবার বিকেলে আরেকবার পাখিদের খাওয়া সময় বিছিয়ে দেন পাটাতন। তার ওপরে সাজিয়ে দেন চাল-ডাল-বাদাম। তাঁর বাড়ি যেন এই পাখিগুলোর এক বিশ্বস্ত ঠিকানা।
জোসেফের বাড়ি চেন্নাইয়ের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র। আবার অনেক সহৃদয় ব্যক্তি মাসে মাসে পাখিদের জন্য চাল-ডাল পাঠায় তাঁর ঠিকানায়। জোসেফ নিজেও স্বীকার করেছেন, যখন তিনি এত গুলো পাখিকে একসঙ্গে খেতে দেখেন তখন মনে হয় এর থেকে আনন্দ আর কিছু যে নেই। এই আনন্দ যেন কখনও ফুরোবার নয়। এ ভাবেই না হয় গড়ে উঠুক আমাদের এই পৃথিবী। যেখানে মানুষ অন্য জীবের লেজে বাজি বেঁধে নয়, বরং তাকে খাইয়ে আনন্দ উপভোগ করবে!
Discussion about this post