ভূত তাড়াতে নানান পুজো হয় এ কথা সবাই জানে। তবে ভূতকে পুজো করা হয় বলে কেউ কখনো শুনেছেন? অনেকে শুনে থাকতেই পারেন। তবে বেশিরভাগেরই অজানা এ বিষয়টি। নদিয়ার ফুলিয়ায় ঠিক এমনটাই ঘটে। লোকদেবতা বিশ্বাসী মানুষের মিলিত ইচ্ছেতে পুজো করা হয় ভূতকে। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার বহু উদ্বাস্তু মানুষ এক সময় নদিয়ার এই অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছিল। ওখানকার মুন্ডু কাটা ভূতের লৌকিক উৎসব এই বাংলাতে এনে পুজো শুরু করেছিলেন এক বাসিন্দা। সেই থেকেই চলছে ভূত পুজো। এ পুজোর উদ্দেশ্য ভূতকে তুষ্ট রেখে তার প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করা। পরিবারের কল্যাণের জন্যই এই পুজো। বাংলা বছরের একেবারে শুরুর দিনেই হয় ভূত পুজো।
মাটির ওপর এক বিশাল ঢিবি। তার বুকের ওপর তৈরি করা হয় চোখ মুখ নাক। মুন্ডু নেই। হাত পা ছড়ানো। এ মূর্তির চেহারা বেশ ভয়ঙ্কর। সেই মূর্তির কাছেই গ্রামের মানুষের আর্জি। আমাদের সন্তান সন্ততিকে ভয় দেখিও না।’ এই হলো তাদের প্রার্থনা। করোনা কালে তাদের এই দাবি পরিণত হয়েছিল, করোনা দূর করার উদ্দেশ্যে। তখন তাদের আর্জি ছিল, ‘তোমার লম্বা হাতের নাগাল দিয়ে টুটি চেপে ধরো করোনার।’ পয়লা বৈশাখের দিন গ্রামবাসীরা সকলে এই প্রার্থনা নিয়েই সামিল নয় এ উৎসবে।
ফুলিয়ার তালতলা পাড়ার এক বাসিন্দা বলেন,”আমাদের পূর্ব পুরুষ ওপার বাংলার মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার বামুন-কুইচা গ্রামে এমন ভূতের পুজোর চল ছিল শুনেছি। আমার বড় জ্যাঠা দুলাল বসাক, দাদু পার্বতী বসাক মিলে ফুলিয়ায় আমাদের বাড়িতে এ পুজো শুরু করেছিলেন। তবে সত্তরের দশকের গোড়ার দিকেও এ পুজো ছিল শুধু আমাদের পারিবারিক উদ্যোগ। এখন গ্রামের মানুষের সাধারণের পুজো।” শুধুই পুজো নয় সঙ্গে চলে মেলাও। মানুষের সমাগমে একেবারে জমে ওঠে প্রাঙ্গণ। চাইলে আপনিও সাক্ষী থাকতে পারেন এই অন্যরকম উৎসবের।
চিত্র ঋণ – কৌলাল
Discussion about this post