ফুল প্রকৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ বোধহয় নেই বললেই চলে। তবে এই ফুলের সৌন্দর্য্যের সাক্ষী হতে বাঙালি বারবার ছুটে যায় ভিন রাজ্যে। কখনো কাশ্মীর কিংবা সিকিমে ফুলের বাগানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই বাংলাতেই রয়েছে মাঠ ভরা ফুলের এক অপূর্ব সমাহার। জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় বলেছিলেন, “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।” সত্যিই আমাদের বঙ্গ জননীর রূপ বারবার আমাদের মুগ্ধ করে তোলে। আর যদি ঘরের কাছেই ‘রূপসী বাংলা’র এমন রূপ স্বচক্ষে পরিদর্শন করা যায়? এ যেন ছোটবেলায় হিন্দী সিনেমার গানে দেখা কোনও দৃশ্য। পূর্ব মেদিনীপুরে রয়েছে এমনই এক মাঠ জোড়া বাহারি ফুলের উপত্যকা ক্ষীরাই।
ক্ষীরাই নদীর নাম থেকেই এই জনপদের নামকরণ। রেল লাইনের দু’পাশে সারি সারি ফুলের বাগান। কোনও আঁকা ছবি যেন সত্যি ফুটে উঠেছে চোখের সামনে। এখানে রয়েছে শহরের কংক্রিটের ভিড় থেকে দূরে মন ভালো করা দৃশ্য। গ্রাম বাংলার এই সৌন্দর্য্যের টানে বারবার ফিরে আসতে মন করে এই বাংলায়। কবির ভাষায়, “তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও — আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে।” রোজকার কোলাহল থেকে বিরাম নিয়ে ঘুরে আসাই যায় এই ফুলের সাম্রাজ্য থেকে।
দুর্গা পুজোর পরে বিভিন্ন ফুলের চারা গাছ লাগানো হয়, কাঁসাই ও ক্ষীরাই নদীর উপত্যকা বরাবর। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে মাঠ জুড়ে ভরে ওঠে ফুলের গালিচা। গোলাপ, গাঁদা, মোরগ ঝুঁটি কিংবা চন্দ্রমল্লিকার মতো রংবেরঙের ফুলে সেজে ওঠে রেল লাইনের দুই ধার। তবে ফুল ছাড়াও নানা পাখির সমাগম হয় এই সময়। এর সঙ্গে শুরু হয় ফুলের ওপরে মধুকরের আনাগোনা। এ যেন, প্রকৃত অর্থেই ‘বাংলার মুখ’-এর চাক্ষুষ দর্শন। বাংলার ‘গ্রাম ছাড়া রাঙামাটির পথ’ মন ভোলাবেই।
ভ্রমণ প্রেমী বাঙালির শীত মানেই চড়ুইভাতি ও ঘুরতে যাওয়া। তাই এই শীতে মহামারী পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়িয়ে একদিনের ট্যুরের আদৰ্শ জায়গা ক্ষীরাই। তবে যাবেন কীভাবে? খুব সহজ! কলকাতা থেকে মেদিনীপুর অথবা খড়গপুরগামী কোনও ট্রেনে উঠে পড়ুন। পাঁশকুড়ার পরের স্টেশন হলো ক্ষীরাই। সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। স্টেশনে নেমেই তিন নম্বর লাইন ধরে, পাঁশকুড়ার পথে ২০ মিনিটের হাঁটা রাস্তা। কিছু দূর গিয়েই চোখে পড়বে, রেল লাইন বরাবর কাঁসাই নদীর দু’দিকে ফুলের রাজ্য। তবে, খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো। আর এটাও মাথায় রাখতে হবে, প্রকৃতি সুন্দর, তাই তাকে স্বচ্ছ রাখার দায়িত্ব আমাদের। আর কী, এগুলোর একটু খেয়াল রেখে, বেরিয়ে পড়ুন উইকেন্ডে ফুলের স্বর্গরাজ্যের উদ্দেশে।
চিত্র ঋণ – চাঁদ কুমার ঘোষ
Discussion about this post