বিগত কয়েক মাস ধরে মণিপুরে চলছে রাজনৈতিক এবং জাতিগত দাঙ্গা। অসংখ্য মানুষ খুন হয়েছেন, আহত হয়েছেন। এই ধরণের হিংসার পরিস্থিতিতে অতি স্বাভাবিক ঘটনা হলো ধর্ষণ। ফলে সেটিও চলেছে পুরোদমে। মোটকথা, অবাক হওয়া বা বিস্ময় প্রকাশ করার মতো এখনও পর্যন্ত কোনো ঘটনা অন্য রাজ্যের মানুষের সামনে ছিল না। সবটাই ছিল স্বাভাবিক, প্রত্যাশিত। সম্প্রতি মণিপুরের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর টনক নড়েছে মানুষ এবং সরকারের। ভিডিওতে দুজন মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানো হচ্ছে। আশেপাশে অসংখ্য পুরুষের উল্লাস। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে নিপীড়িত মহিলা দুজনের গোঙানির আওয়াজ। নিঃসন্দেহে ভয়াবহ দৃশ্য। পরে জানা গেছে মহিলা দু’জন গণধর্ষণেরও শিকার। খবরের কাগজ, টেলিভিশন, মুঠোফোন সর্বত্র দুইজন নারীর নগ্ন শরীর ঘুরছে বিনা বাধায়।
মণিপুরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল জুলাই মাসের কুড়ি তারিখ। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছিল আরও দুইমাস আগে। অনেকে বলছেন সরকার নাকি সব জানার পরেও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার অপেক্ষা করছিল। এবার সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয়ে চোখ রাখি। একুশে জুলাই ভারতে প্রকাশ পেয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের নতুন ছবি ‘ওপেনহাইমার’। বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার ইতিহাসের একজন বিতর্কিত চরিত্র। বেশিরভাগ মানুষ ছবির প্রশংসা করেছেন, একদল মানুষ ছবি রিলিজের পিছনে আমেরিকার চক্রান্ত খুঁজছেন। সে অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ। মজার ব্যাপারটি হল ছবির একজন নারী চরিত্রের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা। অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শেষে ওপেনহাইমার তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে ভগবদ গীতা, ধর্ম, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছেন। ভারতীয় সেন্সর বোর্ড সেই দৃশ্যে ওপেনহাইমারকে নগ্ন রাখলেও, তাঁর বান্ধবীকে অতি সন্তর্পণে একটি সুন্দর কালো জামা পরিয়ে দিয়েছে।
‘ওপেনহাইমার’ রিলিজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের শাসক দলের নেতারা হিন্দুত্বের অপমানের কথা ভেবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। একদিকে মণিপুরের নারীদের নগ্ন দেহ ঘুরছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় আর অন্যদিকে নেতা-মন্ত্রীরা ‘ওপেনহাইমার’ ছবিতে নারীর নগ্নতা দেখানোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। কারণ চরিত্ররা নগ্ন অবস্থায় গীতার শ্লোকের ইংরেজি অনুবাদ উচ্চারন করেছিল। যে দেশের সেন্সর বোর্ড রাজনৈতিক নেতাদের চাপে শেষ পর্যন্ত অভিনেত্রীর জন্য সিজিআই নির্মিত জামা তৈরি করতে বাধ্য হল। প্রায় একই সময় সেই দেশেই মহিলাদের উলঙ্গ করে জনসমক্ষে হাঁটতে বাধ্য করা হলো। অর্থাৎ, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি বারবার একটি প্রশ্নের মুখেই দাঁড় করায়, যে যেকোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক সমস্যাই হোক না কেন, তার প্রথম এবং তীব্র আঘাতটি নামবে নারীর উপরেই। সে জাতিগত দাঙ্গার পরিবেশ হোক, রাজনৈতিক দাঙ্গা হোক, ধর্মীয় দাঙ্গার পরিস্থিতি হোক কিংবা শিল্পের মধ্যে শিল্পের প্রয়োজনেই নারীর সপ্রভিত প্রকাশ হোক।
Discussion about this post