চৈত্রের শেষে বঙ্গ জীবন আবার উৎসবের অঙ্গনে দাঁড়িয়ে। বাসন্তী পুজো, নীল ষষ্ঠী, চড়ক গাজনের মেলায় আমরা সকলে মেতে উঠি। কলকাতা থেকে অল্প দূরে আন্দুল বাজার বাস স্টপের কাছে মহিয়ারী কুণ্ডু চৌধুরীদের বিশাল জমিদার বাড়ী। যদিও আনুমানিক ১৭৪৫ সালে এই বংশের কুশাই রাম (দেব) এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন. যদিও এই প্রাসাদটি কিন্তু নির্মিত হয় ১৮১৬ সালে জমিদার রামকান্ত কুণ্ডু চৌধুরীর আমলে। পাশের দুটি শিবমন্দিরও সেই সময়েই তৈরি। মূল বাড়ীর ভিতরে পাঁচ খিলান বিশিষ্ট ঠাকুরদালান – যেখানে চৈত্র মাসে হরগৌরী এবং শরৎকালে দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়। একই বাড়ীতে বা পরিবারে বছরে দু’বার দুর্গা পুজো হয়তো খুব বেশী দেখা যায় না।
এই বাড়ীতে এই দুটি পুজোর কারণ হিসেবে বলা হয় – সেই আমলে এই পরিবার নুনের ব্যবসায় বিশেষ সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। সেই ব্যবসার বেশীর ভাগ হত জলপথে – অদূরে বয়ে যাওয়া সরস্বতী নদী দিয়ে। আর সেই ব্যবসার সূত্রেই এঁদের কারবার হত এমনকি সুদূর ইংল্যান্ডের চেশায়ারের সঙ্গে। সেই ব্যবসার কাজেই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অনেক সময়েই দীর্ঘ দিনের জন্য বাইরে থাকতে হত। কাজ সেরে তাঁরা যখন গৃহে ফিরে আসার জন্য যাত্রা শুরু করতেন – তখন তাদের নিরাপদে ঘরে ফেরার জন্য প্রার্থনা করতে বাড়ীর মহিলারা করতেন এই বাসন্তী পুজো – হরগৌরী রূপে। আর তাঁদের সেই নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পর আনন্দ আর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে শরৎকালে উদযাপিত হত – দুর্গা পুজো। সেই জন্যে এঁদের দুর্গা পুজোর একটি অঙ্গ হচ্ছে “নৌকা পুজো“। একটি নৌকাকেও পুজো করা হয় এখনো – নিরাপদ জলযাত্রার প্রতীক হিসেবে।
এখনও এই বাসন্তী হরগৌরী পূজোর সমস্ত আয়োজন পরিবারের মহিলারাই করেন। এঁদের গৃহ দেবতা ‘লক্ষ্মী জনার্দন’, তাই সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। আরো একটি বৈশিষ্ট, হরগৌরীর পাশাপাশি এখানে গরুড়ের পুজোও হচ্ছে। গরুড় এখানে অধিষ্ঠান করছেন – পাশেই একটি রূপোর সিংহাসনে, পুজোর সামগ্রীও সব রূপোর। এই দুটি পুজো ছাড়াও এখানে রাস উৎসব হয়, হয় রথযাত্রাও । কলকাতা থেকে অল্প দূরে প্রাচীন এই পরিবারের পুজো দেখতে পাওয়া মনে একটা সুন্দর ভাল লাগার সঞ্চার করে।
মূল বাড়ীর বাইরেই বাড়ীর লাগোয়া জোড়া শিবমন্দির আছে, সেখানেও প্রতিদিন পুজো হয়। আর সেই শিবমন্দিরের পিছনেই আছে এই বাড়ীর প্রাচীন অংশ – যা আজ প্রায় ভগ্নস্তুপ। মূল বাড়ী আর শিবমন্দির ভাল ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও বাড়ীর এই প্রাচীন অংশটি কিন্তু এখন অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – সুব্রত ঘোষ
Discussion about this post