সাহেদুল ইসলাম শুভ, যন্ত্রশিল্পী (বাংলাদেশ) –
দোলের পূর্ণিমায় আলোকিত হয় দুই বাংলার নিশীথ রজনী। বাঙালির নিজস্ব পার্বণের একটি দোল পূর্ণিমা বা দোল উৎসব। আমাদের দুই বাংলায় রক্তিম শিমুল পলাশ আর স্বর্ণালী আমের মুকুলের রঙের ছোঁয়ায় রঙের উৎসব দোলের পূর্ণতা পায়, যা ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপন হয়। বসন্ত আর কোকিলের আগমনী বার্তা এই দোল।অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় এবং চিরন্তন প্রেমের ঘোষণা দোল। প্রকৃতি ও প্রেমের সংমিশ্রণে দুই বাংলার বাঙালির আবেগের বীণা বাজুক এই দোল পূর্ণিমায় একই সুরে। “পূর্ণিমায় দোলযাত্রা, রঙের বাহার,
হৃদয়ে পুলক জাগে, খুশিতে সবার।
ফুটেছে পলাশ ফুল, লোহিত বরণ,
প্রকৃতির শোভা হেরি, হরষিত মন।”
অঙ্কন চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীতশিল্পী (ভারত) – বসন্ত মানেই বাঙালির ‘শান্তিনিকেতন’ নামটাই মাথায় আসে। কিন্তু শান্তিনিকেতনের দোল আমি দেখেছি বড়বেলায়। সঙ্গীতভবনের এক বন্ধুর বাড়ি উঠেছি। উৎসবের দিন রঙ মেখে ভূতও হলাম।
বাড়ি ফিরে স্নান, তিনদিনের জ্বর। জ্বরে পড়ে আছি, মনে পড়ছে দোলের দিনে আবির মাখা চোখে দাঁত মাজা, রঙিন ফেনা। এরই মাঝে কোথায় যেন ঘাপটি মেরে ছিল আরেকটি ‘দেখা’৷ সেদিন যা দেখতে পারিনি, আবির গোলা চোখ তাকেই ধরে রেখেছে মনে।
উৎসবে ছিল বন্ধুরা। কেউ দাস, কেউ রায়, হাঁসদা, চট্টোপাধ্যায়, হেমব্রম, মুখোপাধ্যায়….কিন্তু আরো তো ছিল। ডি’সুজা কি ছিল না? খাতুন? চৌধুরী? ছিল না বৃত্তি পেয়ে পড়তে আসা ওপার বাংলার কেউ? স্মিতহাস্য হলুদ শাড়ি জাপানি মেয়েটি? জাতি, ধর্মের নিজস্ব রং হয়ত আছে৷ উৎসবের রঙের কাছে তা নিতান্তই তুচ্ছ, মলিন, গুরুত্বহীন। রবীন্দ্রনাথ মহামিলনের কিংশুক বৃক্ষটির যে বীজ বপন করতে চেয়েছিলেন বাঙালি অজান্তেই কি তাকে হৃদয়ে লালন করে ফুল ফোটায়নি?
নাহলে ধর্ম, জাতির নিজস্ব রঙের প্রগাঢ়তাকে সম্পূর্ণ ভাবে বিস্মৃত করবার ক্ষমতা কীভাবে হয় কয় আনার আবিরের? কীভাবে পলাশতলায় ফুল কুড়ানো মেয়েটির মনে এক্কাদোক্কা খেলে ভীনদেশের কিশোরটি?
পাখির মতন এইটুকু উপলব্ধিটি আমার জ্বরের ভেতর পাওয়া একটি সোনার মোহর। বুকপকেটে, হৃদস্পন্দনের উপর রাখা। রঙের উৎসবে সকলকে শুভেচ্ছা!
ডঃ অনুমিতা সেনগুপ্ত, সঙ্গীতশিল্পী ও অধ্যাপিকা (ভারত) – “রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও”- বিশ্বকবির আবেগতাড়িত বন্দনা মুহূর্তে আলোড়িত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস। দেহমনে সৃষ্টি হয় এক মহাজাগতিক অনুরণন। মেতে ওঠেন এপার এবং ওপার বাংলার মানুষ। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ঐ অপূর্ব অনুরণনকে আটকাতে পারেনা। ফাগুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হোলিকা দহনের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ হলে সূচিত হয় ‘দোলযাত্রা’। সত্যিই যেন রঙের উৎসবের মধ্যে অশুভ যা কিছু হারিয়ে যায় মুহূর্তেই।
দেশের সর্বত্র উদযাপিত হতে থাকে অনাবিল আনন্দের মধ্য দিয়ে ঐশ্বরিক এই প্রেম নিবেদন পর্ব। প্রকৃতি যেন সুর মিলিয়ে গায় ‘যা ছিল কালো ধলো, রঙে রঙে রাঙা হল”- তাই একজন শিল্পী হিসেবে এই শুভদিনে আবেদন রাখছি আসুন আমরা প্রার্থনা করে বলি, হে ঈশ্বর, তুমি বুদ্ধি দাও, শক্তি দাও, চেতনা দাও। মঙ্গল হোক সবার। জাগরিত হোক এই চেতনার-
“সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”
রঙিন শুভেচ্ছা সকলের জন্য।
শুভজিৎ, সাংবাদিক (ভারত) – রং বদলের দুনিয়াতে রং দিয়েই মন জিতে নিতে হবে। অন্ধকারের কালো রাত যেমন আলোর স্পর্শে দূর হয়, তেমনই ঘৃনার পৃথিবী সুন্দর হতে পারে কেবল রামধনুর রঙে, ভালোবাসার রঙে। দুই বাংলার মানুষকে তাই রঙিন শুভেচ্ছা, রঙিন ভালোবাসা। রঙের উৎসব সকলের মনে ভালোবাসার রঙ লাগিয়ে দিয়ে যাক, সবাই ভালো থাকুক, মনের যত্ন নিক। মনের যত্ন রাখুক।
রাহুল চক্রবর্তী, ডিরেক্টর, IIARI (ভারত) – “দোল এসে গেছে, রঙে রঙে ভরেছে আকাশ,
প্রাণ জুড়ে উচ্ছ্বাস!” রুক্ষতা – শুষ্কতা ঘুচিয়ে একগুচ্ছ পলাশের পরশে আগমন ঘটুক ঋতুরাজ বসন্তের! সিরিয়া হোক বা প্যালেস্টাইন কিংবা আমাদের প্রতিবেশী চট্টগ্রাম রুদ্রপলাশের স্পর্শে ঘুচে যাক গ্লানি, দ্বেষ! সাদা পলাশের কোমল স্পর্শে সঞ্চারিত হোক সম্প্রীতির জয়গান! এই বসন্ত উৎসব আবদ্ধ হোক মৈত্রীর বন্ধনে! কৃষ্ণ পলাশ আর কিংশুকে রঙিন হোক দুই বাংলার মানুষের মনন! সকলকে আমার আকুণ্ঠ ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা!
শ্রাবন্তী নস্কর, বাচিক শিল্পী(ভারত) – “আমাদের এক সুখ এক কান্না, এক পিপাসা।
ভূগোলে ইতিহাসে আমরা এক,
এক মন, এক মাটি, এক মমতা
পরস্পর আমরা পর নই, আমরা পড়শি
আর পড়শিই তো আরশি”
উৎসব প্রিয় বাঙালি সে এপার বাংলায় বা ওপার বাংলায় যেখানেই থাক, বসন্তের আবিরে কিন্তু দুই বাংলার মানুষের হৃদয়ই রেঙে ওঠে। শুভ বসন্ত উৎসব ও হোলির এক আকাশ শুভেচ্ছা, শুভ কামনা জানাই দুই বাংলার মানুষকে।
প্রকৃতি যেমন তার রুক্ষতা কাটিয়ে, নতুন ফুল ফল ও শাখায় ভরে ওঠে তেমনি আমরাও যা কিছু মলিন, জীর্ণ, ধূসর সবকিছু ঝেড়ে ফেলে ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, ও সম্প্রীতির রঙে অবগাহন করি।
ঢাকার আবদুল্লার রঙ এসে লাগুক এই বাংলার ফতেমার হৃদয়ে। আবার মালদার বিক্রমের লাল আবির রাঙিয়ে দিক নোয়াখালির রীনার সিঁথি। এভাবেই সব বিভেদ, বিভাজন ভুলে দুই বাংলাই শিমূল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া ও কোকিলের কুহুতানে মেতে উঠে সামিল হোক আবির খেলায়।
Discussion about this post