সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই জমিদার বাড়িতে বসেই লিখেছিলেন ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের কিছু অংশ। এছাড়াও ঋষি অরবিন্দ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বেরও দর্শন পেয়েছে এই বাড়ি৷ প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো বাড়িটি তৈরি করেন জমিদার রাজবল্লভ চৌধুরী। বারুইপুরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বারুইপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত এক বিশাল জায়গা যৌতুক হিসাবে পেয়েছিলে তিনি। তৎকালীন সেই নবাবের কাছ থেকেই পাওয়া ‘রায়চৌধুরী’ উপাধিও। কর্নওয়ালিসের আমলে এক বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর এই স্বপ্নের প্রাসাদ। ঝোপ-জঙ্গল এবং শ্যাওলাতে ঘেরা সে বাড়ির আজ বেশ করুণ দশা! তবু স্বাধীনতার আগের এবং পরের বহু ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে বারুইপুরের রায়চৌধুরীর পরিবারের সেই জমিদার বাড়ি।
প্রায় তিনশো বছর আগে সেই জমিদার বাড়িতেই শুরু হয় দেবী দুর্গার বন্দনা। রীতি অনুযায়ী, এক চালচিত্রের প্রতিমাতেই হয় পুজো। বাড়ির ঠাকুরদালানেই তৈরি হয় সেই দুর্গা প্রতিমা। তবে ষষ্ঠী নয়, পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকেই। তিনজন পুরোহিত একত্রে করেন সেই পুজো। সপ্তমীর দিন থেকে নবমী পর্যন্ত ছাগ-বলিও দেওয়া হয়। অষ্টমীর দিন জমিদার বাড়িতে বসে জমাটি আড্ডা। একসময় জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে দিক-বিদিক থেকেই অগুনতি মানুষ ছুটে আসতেন। তবে বর্তমানে বিভিন্ন বারোয়ারি পুজোর হিড়িকে সেই ভীড় কমেছে বেশ।
জমিদার বাড়ির বাসিন্দারা আজ প্রায় কেউই থাকেন না সে বাড়িতে। তবে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকলেও প্রত্যেক বছরই পুজোতে দেশের বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। দিন, কাল, সময় বদলালেও তাই জমিদার বাড়ির নিয়ম আজও বদলায়নি। নিয়মানুযায়ীই, আজও দশমীর দিন বিসর্জনের পর নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো হয় রায়চৌধুরী পরিবারে। পুরাণ মতে, নীলকন্ঠ পাখিরা কৈলাসে গিয়ে দুর্গার ফেরার খবর দেয় মহাদেবকে। তাই প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও বহুবছর ধরেই রায়চৌধুরী পরিবারে চলে আসছে এই ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যে ভর করেই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন সে পরিবারের বাসিন্দারা।
Discussion about this post